বিশেষ সংবাদ | তারিখঃ মে ৭, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4751 বার
গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই জেলা প্রশাসন গড়তে সচেষ্ট ছিল তৎকালীন সরকার। একদিকে শত্রুমুক্ত হতে থাকে দেশ এবং দীর্ঘ হতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের কাহিনী, অন্যদিকে চলতে থাকে জেলায় জেলায় প্রশাসক নিয়োগের কাজ। স্বাধীন দেশের প্রথম জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে মনোনীত হন ওয়ালিউল ইসলাম। যশোর সেনানিবাস পতনের পর ৯ ডিসেম্বর যশোর কালেক্টরেটে ওয়ালিউল ইসলামের নেতৃত্বে স্বাধীন দেশের জেলা প্রশাসনের যাত্রা হয়।
ওয়ালিউল ইসলামের নিয়োগের কয়েকদিনের মধ্যে সরকার ১৭টি জেলায় জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়। তাদের মধ্যে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানের (সিএসপি) কর্মকর্তা ছিলেন ছয়জন। বাকি ১১ জন ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (ইপিসিএস) কর্মকর্তা।
স্বাধীন দেশে ডিসি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন সচিব হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন কেউ কেউ। পরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদেও নিয়োগ পেয়েছেন দক্ষ আমলারা।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালের প্রশাসনের নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, বিজয়ের আনন্দ, লাখো প্রাণ বিসর্জন এবং নারীদের সম্ভ্রম হারানোর শোক সঙ্গে নিয়েই স্বাধীন দেশ গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত হয় তৎকালীন সরকার। এরই অংশ হিসেবে জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের ভিত মজবুত করতে ডিসি নিয়োগ করা হয়। কুষ্টিয়ার ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ইপিসিএস কর্মকর্তা শামসুল হককে। সিএসপি কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুস সামাদকে করা হয় চট্টগ্রামের ডিসি। কর্মজীবনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব পদেও দায়িত্বপালন করেন। পরে প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদায় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় তাকে।
আরেক সিএসপি কর্মকর্তা আকবর আলি খান পান সিলেট জেলার দায়িত্ব। কর্মজীবনের সায়াহ্নে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান।
স্বাধীন দেশে ময়মনসিংহের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান সিএসপি কর্মকর্তা খসরুজ্জামান চৌধুরী। বরিশালের ডিসি করা হয় মামুনুর রশীদকে। কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে সচিব হিসেবে অবসরে যান সাবেক এই সিএসপি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর কুমিল্লার ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। কর্মজীবন থেকে সচিব হিসেবে অবসরে যান সাবেক এই সিএসপি কর্মকর্তা। পরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবেও নিয়োগ পান তিনি।
নতুন দেশের প্রশাসনে খুলনায় ডিসি পদে নিয়োগ পান সিএসপি কর্মকর্তা কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী। তিনি পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হয়েছিলেন। স্বাধীন দেশে পাবনার ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় কাজী লুৎফুল হককে। তিনি ইপিসিএস কর্মকর্তা ছিলেন। রাজশাহীর ডিসি হন ইপিসিএস কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, পটুয়াখালীতে ডিসি করা হয় আরেক ইপিসিএস কর্মকর্তা বিভূতিভূষণ বিশ্বাসকে। টাঙ্গাইলের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান ইপিসিএস কর্মকর্তা এম ইসহাককে। আরেক ইপিসিএস কর্মকর্তা আবদুল মোমেনকে ফরিদপুরের ডিসি নিয়োগ দেয় তৎকালীন সরকার।
স্বাধীন দেশের প্রথম প্রশাসনে নোয়াখালীর ডিসি করা হয় জে এন দাসকে। তিনিও ইপিসিএস কর্মকর্তা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া ইপিসিএস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফকে। বগুড়ার ডিসি করা হয় আবদুল লতীফ ভূঁইয়াকে। তিনিও ইপিসিএস কর্মকর্তা ছিলেন। দিনাজপুরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পান ইপিসিএস কর্মকর্তা আমানত উল্লাহ এবং রংপুরের ডিসি করা হয় ইপিসিএস কর্মকর্তা এম আবুল কাশেমকে।
ঢাকা জেলায় প্রথমে ডিসি নিয়োগ করা হয়নি। পরে নাটোরের মহকুমা প্রশাসক কামাল উদ্দীনকে ঢাকার ডিসি করে সরকার।