খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, ধর্ম, সাতক্ষীরা | তারিখঃ অক্টোবর ১১, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3118 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দিরের “কালি দেবী”র মাথায় থাকা স্বর্ণের মুকুট চুরির অভিযোগ উঠেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই মন্দির পরিদর্শনকালে “কালি দেবী”র মাথায় উপঢৌকন হিসেবে মুকুটটি পরিয়ে দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে পুরোহিত ও সেবায়েতের অনুপস্থিতির সুযোগে এই চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
মন্দিরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ২৪-২৫ বছর বয়সী এক তরুণ দুপুর ২টা ৪৯ মিনিটে মন্দিরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্বাভাবিকভাবে মন্দিরে প্রবেশ করে তিনি “কালি দেবী”র পিছনে দাঁড়িয়ে মুহুর্তের মধ্যে মুকুট খুলে নিয়ে টি শার্টের ভিতরে লুকিয়ে ফেলেন। জিন্সের প্যান্ট ও সাদা টি শার্ট পরিহিত ঐ তরুণ মুকুট খুলে নেয়ার আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আশেপাশে কেউ রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করলেও তাকে কোনো রকম বিচলিত মনে হয়নি। ঘটনাটি মাত্র ১০/১২ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটেছে বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। মন্দিরে প্রবেশ করে মুকুট নেয়া তরুণকে প্রশিক্ষিত ও পরিকল্পনামাফিক সে কাজটি করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সনাতন ধর্মালম্বীদের মতে কালি’র একান্ন পীঠের এক পীঠকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর উপজেলা সদও থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দুরবর্তী ঈশ্বরীপুর গ্রামে গড়ে ওঠে শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দির। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য সনাতন ধর্মের দর্শনার্থী মন্দিরে থাকা “কালি দেবী”র দর্শনে আসেন।
মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জী জানান, তিনি দুপুর ২টার একটু আগে মন্দির তালা লাগিয়ে বাড়িতে যান। সেবায়েত রেখা রানী পূজার কাজে ব্যবহৃত প্লেট ও গ্লাস পরিষ্কারের জন্য মন্দিরের প্রবেশদ্বারের তালা খুলে কিছু সরঞ্জাম পাশের ভবনে রেখে আসেন। ফেরার পর দেখেন “কালি দেবী”র মাথার মুকুট নেই। পরে তিনি বিষয়টি পুরোহিতসহ অন্যদের জানান।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়রা মুকুট চুরি জন্য পুরোহিতকে দায়ী করেছেন। ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন মন্ডল জানান, চুরির বিষয়টি পুরোহিত প্রায় দুই আড়াই ঘণ্টা গোপন রেখেছিল। এমনকি শুরুতে তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখাতে আপত্তি জানান। ঘটনার পরপরই ভিডিও ফুটেজ দেখার সুযোগ মিললে হয়তো উপস্থিত দর্শনার্থীদের সহায়তায় চোরকে চিহ্নিত করা সহজ হতো।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মন্দিরের সেবায়েত পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বদ্ব চলছে। প্রায় এক বছর পূর্বে মন্দিরের দেখভালকে কেন্দ্র করে সেবায়েত রেখা রানীকে পিটিয়ে আহত করারও ঘটনা ঘটেছিল। রেখা রানীকে মন্দির থেকে বিতাড়িত করতে একটি পক্ষ অনেকদিন ধরে তৎপর ছিল। এছাড়া মন্দিরের উপার্জিত অর্থ-কড়ির মালিকানা নিয়েও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে বলেও একাধিক সুত্রের দাবি।
এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ওসি (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রহস্য উম্মোচনে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর কালিগঞ্জ-শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছেন।”