ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ সহ সব ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। এসময় হাসপাতালে শত শত রোগীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তারা রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। সর্বশেষ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসাররা তাদের কক্ষ বন্ধ করে দেন, বন্ধ করে দেয়া হয় জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার।

এরপর থেকেই ঢাকা মেডিকেলের সামনে রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অধিকাংশকে চিকিৎসক না পেয়ে হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে দেখা গেছে।

নরসিংদী থেকে আহত সুমন নামে এক রোগীকে নিয়ে আসে স্বজনরা। তবে হাসপাতাল আসার পর চিকিৎসক না পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স করে অন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

তার ভাই মো. কবিরদ হোসেন বলেন, সকালেই নরসিংদী হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল পাঠানো হয় রোগীকে। এখানে আসার পর দেখি জরুরি আগের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ডাক্তারদের রুমও সব বন্ধ করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা কর্মবিরতি করছেন এটি শুনে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানেও চিকিৎসক আছেন কি না জানি না।

সিয়াম নামে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে আসেন তার বাবা-মা। জরুরি বিভাগের সামনে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শিশুটির মা বলেন, প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে শিশুটির। এজন্য সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। কখন দেখাতে পারবো তাও জানি না।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহসানুল ইসলাম দিপ্ত (২৩) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। দিপ্তর মৃত্যুতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ এনে ডা. ইমরান নামে নিউরোসার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসককে মারধর করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা যায়। হাসপাতালটির সভাকক্ষে পরিচালকের সঙ্গে ছাত্ররা আলোচনায় বসে দোষী চিকিৎসকদের বিচারের দাবি করেন। অন্যদিকে, চিকিৎসককে মারধর করা অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

স্বজনরা জানান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী দিপ্ত। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলায়। বাবার নাম শহিদুল ইসলামের। মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকতেন তিনি। শুক্রবার রাতে কুর্মিটোলা এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। রাতেই পথচারী এক শিক্ষার্থী দিপ্তকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে। ভর্তি করার পর চিকিৎসাধীন শনিবার সকালে মারা যান তিনি। তবে পরিবারের আবেদনে বিনা-ময়নাতদন্তে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তবে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনায় আসে, শুক্রবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে। এরপর থেকে হাসপাতালে জড় হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরাও হাজির হন ঢাকা মেডিকেলে। এক পর্যায়ে জরুরি বিভাগের নিউরোসার্জারির ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ডা. ইমরানকে মারধর করেন শিক্ষার্থী। নিয়ে যান পরিচালকের রুমে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঘটনাটি সমাধানের জন্য পরিচালকের সভাকক্ষে আলোচনায় বসেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বিইউবিটি’র ভিসি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও।

সভা শেষ হলেও রাতে হাসপাতালটির চিকিৎসকরা দাবি তুলেন, ডা. ইমরানকে মারধরকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২৪ ঘণ্টার ভিতর তাদের আইনের আওতায় আনা না হলে হাসপাতাল সাটডাউনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।