স্টাফ রিপোর্টার : রক্তাক্ত বাংলাদেশ। লাশের মিছিল। নজিরবিহীন গুলি, সংঘাত, সংঘর্ষ। নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। নিহতদের বড় অংশ আন্দোলনকারী। সহিংস হামলায় নিহত হয়েছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া কুমিল্লায় আরও এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শাসকদলের নেতাকর্মীও। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশ আগে কখনো এমন দিন দেখেনি।

সারা দিনই ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে নিহতের সংখ্যা। হামলা-সংঘর্ষ হয়েছে জেলায় জেলায়। পুরো দেশই যেন যুদ্ধক্ষেত্র। একই পরিস্থিতি ছিল রাজধানী ঢাকাতেও। পয়েন্টে পয়েন্টে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্র-জনতার। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে স্থানে স্থানে। তাদের হাতে রামদাসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রও ছিল। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল লাঠি।

শনিবার আওয়ামী লীগ যখন কর্মসূচি ঘোষণা করে তখন থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর সরকার সমর্থকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আন্দোলনকারীদের প্রতি। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল। দিনের শুরুতেই অবশ্য ছাত্র-জনতা শাহবাগের নিয়ন্ত্রণ নেন। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়ার মুখে সরে যান। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সংগঠিত হয়ে দিনভর বাংলামোটর থেকে গুলি করে। ক্রমশ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকায়।

দেশের বিভিন্নস্থানেও সরকার সমর্থকরা হামলা চালান আন্দোলনকারীদের ওপর। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীরাও আওয়ামী লীগের অফিস এবং দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতিতে নতুন করে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবৎ করা হয়েছে কারফিউ। দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আজ ডাক দেয়া হয়েছে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির। এই কর্মসূচির আওতায় সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের রাজধানীতে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিরোধী দলগুলো ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

দিনব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষে কমপক্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ। অতিরিক্ত চাপের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ঢাকা মেডিকেলে মিনিটে মিনিটে আসে আহত ও নিহতদের বহনকারী এম্বুলেন্স। রাজধানীতে অন্তত ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাশ এসেছে ৭টি। তারা হলেন- কাওরান বাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ কবি নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষার্থী তাহিদুল ইসলাম (২২), ফার্মগেটে গুলিবিদ্ধ ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রমিজ উদ্দিন (২৮), সায়েন্সল্যাবে গুলিবিদ্ধ হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২২), যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ ভ্যানচালক রিয়াজুলদৌল্লা (৩২), টিকাটুলিতে গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত একজন, শাহবাগে গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত একজন। এ ছাড়াও আরেকজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরে একজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদপুরের বছিলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ১৯ জেলায় পুলিশসহ অন্তত ১০২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই হলেন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। সুত্র: মানব জমিন।