খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ জুন ১০, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1925 বার
আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের ৩নং কুমড়ি গ্রামে ধ*র্ষণের শিকার এক কিশোরীর ইজ্জতের দাম ৩০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করলেন সমাজপতিরা। সেই টাকার হাতবদলও হয়েছিল। কিন্তু বেরসিক পুলিশের কারণে সেটা ভেস্তে গেছে।
ধ*র্ষক এখন পুলিশের খাঁচায় বন্দী। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় আটক একমাত্র আসামি একই গ্রামের আঃ গফুর ওরফে কানকাটা গফফার এর ছেলে তিন সন্তানের জনক মিজানুর রহমান মিজান(৪৫)। আর এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রহসনের বিচার বসিয়েছিলো স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুল ইসলাম, ওহাব মোল্লা, মিঠু, জিয়া, আব্দুল্লাহ ওরফে চোর আব্দুল্লাহ সহ আরও কয়েকজন।
ঘটনার সুত্রে জানা যায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসীর মেয়ে ৮ম শ্রেণির ১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে গতকাল (৯ জুন) রাতে জোরপূর্বক ধ*র্ষনের সময় স্থানীয় জনগণ হাতেনাতে ধরে ফেলে। এর আগেও ৬ জুন উক্ত কিশোরীকে মিজানুর জোর করে ধর্ষণ করে।
পরে স্থানীয় ভাবে গ্রাম্য মাতব্বরদের দিয়ে ৩০হাজার টাকায় মিমাংসার চেষ্টা করেও রেহায় পায়নি ধ*র্ষক মিজানুর রহমান (৪৫)। ঝিকরগাছা থানার চৌকষ অফিসার ইনচার্জ বিএম কামাল হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বাঁকড়া তদন্ত কেন্দ্রের টুআইসি এসআই(নিঃ) জিয়াউর রহমান সহ একটি টিম রবিবার রাতের শেষাংশে ও সোমবার রাতের প্রথম প্রহরে অভিযান পরিচালনা করে ধ*র্ষক মিজানুর রহমানকে আটক করেন।
এঘটনায় পরবর্তীতে মেয়েটির মা বাদী হয়ে ঝিকরগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামী মিজানুর রহমান ও বাদির বাড়ি পাশাপাশি এবং গ্রাম্য চাচা শ্বশুর। কারণে অকারণে বাদি ও আসামীদের বাড়ি যাতায়াত ছিল। আসামি কিশোরীর দাদা সম্পর্কের হওয়ায় বাদির মেয়েকে বিভিন্ন সময় ইয়ার্কির ছলে কিছু কটু কথা বললেও বাদি কিছু মনে করতো না। আসামীদের পুকুরে বাদির মেয়ে গোসল করতে গেলেও আসামী তাকে প্রলোভন দিয়ে তার ঘরে ডাকত এবং কুরুচিপূর্ণ্ কথাবার্তা বলত। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) বাদি তার বাড়িতে থাকা অবস্থায় বাদির মেয়ে ও তার চাচাতো বোন বেলা আনুমানিক ১২টা ৪০মিনিটের সময় আসামীদের পুকুরে গোসল করতে গেলে ঐ সময় আসামীর স্ত্রী ও ছেলে বাড়িতে না থাকার সুযোগে আসামী কৌশলে বাদির মেয়েকে তাহার ঘর ঝাড় দেওয়ার কথা বলে আসামীর শয়ন কক্ষে নিয়ে যায় এবং শয়ন কক্ষের খাটের উপর বসিয়ে আসামী তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এসময় মেয়েটি চিৎকার চেচামেচি করতে গেলে আসামীর খাটের নিচে থাকা ছুরি বের করে বাদীর মেয়েকে ভয় দেখায়।
এক পর্যায়ে আসামী মিজানুর রহমান বাদির মেয়ের পরিহিত স্যালোয়ার ও কামিজ খুলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধ*র্ষণ করে এবং ছুরি দেখিয়ে কাউকে কোন কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়। বাদির মেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে গোসল না করেই কান্না করতে করতে বাড়িতে গিয়ে বাদির সাথে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
ঘটনার বিষয়ে বাদির শ্বশুরশাশুড়ির মাধ্যমে আসামীর স্ত্রীকে জানান। তখন আসামীর স্ত্রী বাদিদের চুপ থাকার জন্য অনুরোধ করেন। বাদিসহ পরিবারের লোকজন মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চুপ থাকে। বিষয়টি নিয়ে দুপরিবারের মধ্যে কানাঘুষার একপর্যায়ে গ্রামের মধ্যে জানাজানি হলে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে বিষয়টি নিয়ে আসামীর বাড়িতে শালিস বৈঠকে বসে বাদীর অমতে ৩০হাজার টাকা জরিমানায় ঘটনার রফা করা হয়। এই শালিস না মেনে ঘটনায় ভিকটিমের মাতা বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১২, তারিখ ১০/০৬/২০২৪ ইং।
থানার অফিসার ইনচার্জ বিএম কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক ভাবে আমার টিম অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমকে উদ্ধার করি ও আসামীকে আটক করে থানাতে নিয়ে আসি। আসামির বিরুদ্ধে ৯(১) ২০০০সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩; জোর পূর্বক ধ *র্ষণ করার অপরাধে মামলা রুজু করে আসামীকে বিচারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।