বিশেষ সংবাদ | তারিখঃ এপ্রিল ২৬, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 9332 বার
সনতচক্রবর্ত্তী ফরিদপুর :গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত সাধারণ একটি নাম “কৃষ্ণচুড়া ফুল “। ফরিদপুরসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় এটি দেখা যায়।
কৃষ্ণচূড়া বাঙালির কাছে অতিপরিচিত একটি ফুল। বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও নানা উপমায় এর রূপের মোহনীয় বর্ণনা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মোহনীয় রূপে প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষ এখনো গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের ছোঁয়া পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষ্ণচূড়া তার রক্তিম আভা ছড়ানোর মাধ্যমে জানান দেয়-সে এখনও টিকে আছে প্রকৃতিকে সাজাবে বলে।
সরেজমিনে ফরিদপুর জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার গাছে থোকায় থোকায় ফুল ফুঁটেছে। সবুজের বুকে শুধুই লালের রাজত্ব। দূর থেকে মনে হয় ময়ূর তার রাঙা পেখম মেলে ধরেছে প্রকৃতির মাঝে। লক্ষ্য করা গেছে, ফরিদপুর খুলনা মহাসড়কের মাজকান্দি- মধুখালি সড়কসহ জেলার বিভিন্ন বসতবাড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমারোহ। কৃষ্ণচূড়া ফুলে ঠাসা গাছের ডালগুলো নিয়ে নুয়ে পড়েছে।
কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এ বৃক্ষ যেন এখন বাঙালির ঐতিহ্যের একটা অংশ হয়ে গেছে সবার অলক্ষে। এদেশে এসে পরিচিত হয়েছে নতুন নামে। অনেকেই মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণের নাম থেকে এ গাছ ও ফুলের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর সবচেয়ে বড় খ্যাতি হচ্ছে মোহনীয় রক্তিম আভা। সবুজের বুক চিরে বের হয়ে আসা লাল ফুল এতটাই মোহনীয় যে, পথিচারীরাও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষের উচ্চতা তেমন একটা বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠলেও তার শাখা-প্রশাখা বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত থাকে। কৃষ্ণচূড়া পুরো গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে। বিভিন্ন দেশে এই ফুল বিভিন্ন সময়ে ফুটলেও বাংলাদেশে ফুটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। এই পুরো সময়টাতেই কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে উজ্জ্বল লাল আভায়।
তপ্তরাজ্যে এমন উজ্জ্বল লাল রং সত্যিই দুর্লভ বলেই হয়তো সবাই মেতে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার বন্দনায়। অন্যান্য সময়ে এ বৃক্ষের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না। অনেকটা আড়ালেই থেকে যায় তখন। এপ্রিলে গ্রীষ্মের শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সবুজ পাতার মাঝে বেরিয়ে আসতে থাকে লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুল। মানুষের দৃষ্টিগোচর হতে থাকে তার সৌন্দর্য। তখন আর আলাদা করে তার খোঁজ নেওয়ার দরকার হয় না। দূর থেকে দেখে মনে হয়-সবুজের বুকে হয়তো আগুন লেগেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই কৃষ্ণচূড়া ফুল লাল ও হলুদ রঙয়ের হয়ে থাকে। আমরা না জেনে একে কৃষ্ণচূড়া বলে থাকি। লাল রঙয়ের ফুলকে কৃষ্ণচূড়া ও হলুদ রঙয়ের ফুলকে রাধাচূড়া বলা হয়। তবে হলুদ রঙে রাধাচূড়া এখন তেমন দেখা যায় না বলেই চলে। আমাদের দেশে এপ্রিল মে মাসে এই ফুল ফোটে। বছরের অনান্য সময় এই ফুল বা গাছ সচরাচর চোখে না পড়লেও এপ্রিল মে মাসে যখনি গাছে নতুন পাতা বা ফুল ফোটা শুরু করে তখনি যেন পথচারির নজর কাড়ে মনোমুগ্ধকর এই কৃষ্ণচূড়া।
যাই যায় দিনের সাংবাদিক দীপঙ্কর পোদ্দার অপু বলেন, বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে জেলার আনাচে-কানাচে কৃষ্ণ চুড়া ফুল গাছ। ভবিষ্যতে এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় রেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীদের।
বোয়ালমারী প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল সিকদার বলেন, প্রকৃতিতে এখন মনোমুগ্ধকর রঙ ছড়িয়েছে কৃষ্ণচূড়া। বোয়ালমারীসহ ফরিদপুরে একসময় প্রচুর পরিমাণে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যেত। গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলত। কালের পরিক্রমায় আবাসন ব্যবস্থার কারণে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। সৌন্দর্য উপভোগ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ অভিযান চালাতে হবে।