খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, ঝিনাইদহ | তারিখঃ জানুয়ারি ৬, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2648 বার
আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ নির্বাচনী প্রচারণা শেষে এখন চলছে ভোটের বিসাব নিকাশ।
শহর থেকে গ্রামে, চায়ের দোকান, বাজার ঘাট সব খানেই চলছে কে হবেন নৌকার মাঝি? নাকি নৌকার পরিবর্তে নতুন কেউ আসছেন? এমন হাজারো প্রশ্নের মধ্যে একটি কথাই সবার মুখে মুখে সেটি হলো বিরোধীদল বিহীন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতার কমতি না থকলেও ঝুঁকির মুখে পড়েছে নৌকা। খুব সহজে নৌকার মাঝিরা পার পাবে না এমন কথা সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চারটি আসনেই নৌকার নেতাকর্মীরা বহু ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চেতনা আর দর্শন বিসর্জন দিয়ে নেতা ছুটছেন নৌকার বিপরীতে। আর এটা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে। কেন্দ্র থেকে কোন বাধা নিষেধ না থাকায় মাঠের নেতারা এখানে লাগামহীন। তাদের অনেকেই নৌকার পক্ষ থেকে করে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পেছনে ছুটছেন বলেও অভিযোগ।
ঝিনাইদহ-১ আসনে একাধিকবার সংসদ নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা আব্দুল হাই। ভদ্র ও মার্জিত হিসেবে পরিচিত তিনি এবার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। তিনি বিভিন্ন সভা সমাবেশে নিজেই স্বীকার করে বক্তৃতা দিয়েছেন এবারের ভোট খুবই কঠিন সমীকরণে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গের একাধিক মামলা হয়েছে। ভোটের মাঠ ছেড়ে তাঁকে দৌড়াতে হয়েছে আদালতে। আগামীকালের নির্বোচনে তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদী।
ঝিনাইদহ-১ আসনে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল নানা ভাবে মাঠে চমক সৃষ্টি করেছেন। তিনি ট্রাট প্রতিক নিয়ে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার স্ত্রী মুনিয়াও ফুলকিপ প্রতিক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীর এই ভোটের লড়াই শৈলকুপাবাসি উপভোগ করছেন। নজরুল ইসলাম দুলাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তিনি জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে আশা ব্যক্ত করে বলেছেন শৈলকুপার মানুষ মুক্তি চাই। সামাজিক দল ও হানাহানি থেকে মুক্ত হতে তাকে ভোট দিবেন।
নির্বাচনে শৈলকুপার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৭ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৯। মোটি উপজেলা ভিত্তিক ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৭।
জেলা সবচে গুরুত্বপুর্ন আসন হচ্ছে ঝিনাইদহ-২। এই আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও ভোটযুদ্ধ হবে মুলত নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। ঝিনাইদহ-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। তিনি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে। তার পিতা স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন। সেই হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে সমির একটি আলাদা মর্যাদা ও মুল্যায়ন আছে। কিন্তু মহুল প্রার্থী হওয়ার কারণে তার সুনিশ্চিত বিজয় অনেকটা ঝুৃকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মহুলের পেছনে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা অবস্থান নিয়েছেন। জেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত নেতৃত্ব দুই ভাগ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসার বড় ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। দীর্ঘদিন ধরেই মহুল সামাজি কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। সারা জেলা জুড়ে তার একটা প্রভাব রয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় মহুলের নারী কর্মী ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মহুলের ঈগল প্রতিক যদি বিজীয় হয়, তবে আবাক হওয়া কিছুই থাকবে না।
ঝিনাইদহ-২ আসনের ১৮৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩২ টি র্সবোচ্চ ঝুঁকি পূর্ণ কেন্দ্রের তথ্য পাওয়া যায়। ঝিনাইাদহ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত ৩৩ জন।মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭ শত ৬২ জন।
ঝিনাইদহ ৩ আসনে এবার নৌকার নতুন মুখ প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব সালাহউদ্দীন মিয়াজী। ভোটের মাঠে তিনি নতুন হিসেবে যেমন সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। কোটচাঁদপুর-মহেশপুর এলাকা বিএনপি জামায়াত অধ্যুষিত। সেখানে ভোটের সুবিধা পেতে হলে এই দুই দলের ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে হবে। কিন্তু সেটা না করতে পারলে দুই প্রার্থীর জন্য হবে মহবিপদ। তবে ওই আসনে নৌকার বিপরীতে আলাদা সেন্টিমেন্ট কাজ করছে। ফলে চঞ্চল নৌকা বিরোধী সেন্টিমেন্ট কাজে লাগাতে পারে। তবে একই দলের সমর্থক দুই প্রার্থীর যে কেউ এই আসনে জয়ী হতে পারে। মিয়াজী ও চঞ্চল যদিও তারা জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।
নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৭। মোটি উপজেলা ভিত্তিক ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৬৬।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে সাবেক সাংসদ প্রয়াত আব্দুল মান্নানের ভাই আব্দুর রশিদ খোকনের। কালীগঞ্জের আ’মীলীগ অনেক আগ থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে আরো বিভক্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আনার বিরোধীরা খোকনের পেছনে জোটবদ্ধ হয়ে মাঠে কাজ করছেন। ফলে প্রতি মুহুর্তে খোকনের ভোটের মাঠ সমৃদ্ধ হচ্ছে এমনটি শোনা যাচ্ছে। ভোটররা বলছেন খোকনের ভোট খুবই চাপা অবস্থায় আছে। ভোট কেন্দ্রে যেতে পারলে কালীগঞ্জের হিসাব পাল্টে যেতে পারে। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ আনারও আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও তার সমর্থকরা কিন্তু নানা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছেন। নিজ দলের দুই প্রার্থী হওয়ায় সবাই আতংকে রয়েছেন কি হয়, কি হয়। তবে সেখানকার মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রয়েছে এমনটি দাবী করছেন আব্দুর রশিদ খোকন।
নির্বাচনে কালীগঞ্জে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬২০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৬ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার। মোটি উপজেলা ভিত্তিক ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৭।