জেলার খবর, ঢাকা বিভাগ, ফরিদপুর | তারিখঃ মার্চ ১২, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4720 বার
সন্দীপন চক্র বত্তী: আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমউদ্দিন ছোট্র বাড়ি রসুলপুরে যাও’ পল্লীকবি জসীম উদ্দীন’র বিখ্যাত এই কবিতা আমরা সবাই পড়েছি। কবিতার মতো আসমানী নাহলেও কাছাকাছি আনোয়ারা বেগম (৮৫) নামের একজনের সাথে দেখা হলো ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলা জর্জ একাডেমির খেলার মাঠ সংলগ্ন পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে।
তার নাম, আনোয়ারা বেগম( ৮৫)। প্রায় ৪৫ বছর আগে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে স্বামী মারা যায় । সেই থেকে অন্যের বাড়ি কাজ করে, চেয়ে চিন্তে মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে ছোট একটি ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন স্বামী হারা আনোয়ার বেগম ।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শুনেছি কত মানুষ গরীবদের সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগের কেউ খবরও নেয় না। সরকার নাকি কত ঘর দিচ্ছে, আমাগেরে একটা ঘর দিলে মাথা গুজার জায়গা হতো। পরের জায়গায় থেকে একটা মেয়েটারে বিয়ে দিয়েছি,আর একটা মেয়ে নিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছি কোন রকম। কোন দিন খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমোতে পারি না। এই ভাঙ্গা পরিত্যক্ত ঘরে সবাই খুব কষ্টে থাকি। বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে আর ঝড়ের দিনে ভয়ে অন্যের ঘরের চলে যায়।’
সরেজমিনে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির খেলার মাঠ সংলগ্ন পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গা বিল্ডিং ,জানালা দরজা কিছুই নেই, স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে,টয়লেট নেই নেই কোন আলো। এরকম একটি পরিত্যক্ত ঘরে বসবাস করছেন আনোয়ার বেগম ও তার মেয়ে ।
এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগে দুটি কন্যা সন্তান রেখে স্বামী মুক্তার হোসেন মারা যায় । সন্তানও নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। বর্তমান এক মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে শশুর বাড়ী সংসার করে।আর এক মেয়ে নিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি করে সংসার চালান রান্না করার শক্তি নেই। রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারা দিন বিছানায় পরে থাকি। দু:চিন্তা কুড়ে কুড়ে খায়।বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি কতৃপক্ষ যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পরে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। এতো কষ্ট এই বয়সে সহ্য হয় না। তাই আল্লাহ নিয়ে গেলে বেচে যাতাম। সারা জীবনে একটু সুখের মুখ দেখলাম না।
জমিজমা না থাকায় সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় আনয়ারা বেগম। অন্যের বাড়ি কাজ না পেলে অনাহারে থাকতে হয়।
সমাজ সেবক সুমন রাফি বলেন, বিষয়টি জানা মাত্রই বৃদ্ধা আনোয়ারার বেগম এর গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং আমি সাধ্য মতো সহযোগিতা করছি ।
তিনি আরও বলেন, জমিজমা নেই এরকম ভূমিহীন হতদরিদ্র মানুষের জন্যই যদি সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে আসতো তাহলে সমাজে আর কোন অসহায় মানুষ থাকতো না।