খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, নড়াইল | তারিখঃ নভেম্বর ১৩, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 7409 বার
নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের সুস্বাদু রস পাটালি ও গুড় বিলুপ্তির প্রায়।খেজুরের রস’ আমরা সবাই জানি শীত এলেই অনেকটাই পাল্টে যায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম-বাংলার চিত্রপট।
শীতের মৌসুমে ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলির উৎসব আর খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি সুস্বাদু পাটালি গুড়। এই পাটালি গুড়ের চাহিদা শুধু বাংলাদেশেই নয় রয়েছে বিদেশেও। আবার আসছে শীত ইতোমধ্যেই রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে যশোরের গাছিরা। বেলা গড়ালেই খেজুরগাছে চড়ে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ পরিষ্কারসহ হাঁড়ি ভাঁড় বা ঠিলে বাঁধার কাজ শুরু করেছে। সূর্যাস্তের আগেই গাছে হাঁড়ি লাগানো শেষ করে। রাত শেষে হাঁড়িতে যে পরিমাণ রস সংগ্রহ হয় সেই রস আবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত নামাতে ব্যস্ত থাকে গাছিরা। সমস্ত রস বিশেষভাবে তৈরি করে নেয়া একটি স্টিলের বড় কড়াই (ব্রেল) এ জ্বাল করে সুস্বাদু গুড় তৈরি করা হয়। পুরোদমে মৌসুম শুরু হচ্ছে যেন বিরাম পাচ্ছে না গাছিরা।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অনেকটা আগে থেকেই শীত নেমে আসে ফলে শহরের তুলনায় গ্রামে শীত একটু বেশী। নড়াইল জেলার সর্বত্রই খেজুরের গাছ তৈরি চলছে শেষ হলেই রস সংগ্রহের পালা। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে উৎসব মুখর পরিবেশ হয়ে থাকে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের খেজুরের গাছে ঝুঁকি নিয়ে গাছিরা গাছ তোলা কাটা শেষ করছে। কোমরে মোটা রশি (দড়াঁ) বেঁধে গাছে ঝুলে ঝুলে রস সংগ্রহের উপযোগীর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গাছিরা। পেশাদার গাছিদের তেমন কোন সমস্যা না হলেও রস সংগ্রহের এক শ্রেণির উৎসুক মানুষও পিছিয়ে নেই। তারা দুঃসাহসিক শক্তি নিয়ে গাছে ওঠা নামা করছে রস সংগ্রহের জন্য।
শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে যশোর জেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন থানা থেকে গাছিদের আগমন ঘটে। গাছিরা নিজস্ব বা খেজুর গাছপ্রতি টাকা, রস বা গুড় দেয়ার পালাক্রম চুক্তিতে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড়, পাটালি গুড় তৈরি করে।
খেজুর রস দিয়ে স্থানীয় গাছিরা চিতই- রসে ভিজানো পিঠা (গ্রামের প্রিয় পিঠা), পাটালি, নারকেল পাটালি, নালি গুড় দানা গুড় তৈরি করে। এই নালি গুড়ের খুবই চাহিদাও রয়েছে। খেজুরের রস ভাঁড় (ঠিলে) ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা বিক্রি করে পাটালি গুড় বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ১৫০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। নালি গুড় বিক্রি হয় ১৭০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নালি ও পাটালি গুড় তৈরির পর্ব চলে প্রায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ দৃশ্য চোখে পড়ে তবে এখন এমন চিত্র খুবই কম। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য জেলার এক সময় খ্যাতি ছিল কিন্তু সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুরগাছ। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুরগাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুর পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুরগাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তাছাড়া বর্তমানে খেজুর গাছে লাভ কিংবা পর্যাপ্ত রস না পাওয়ায় সব গাছ কেটে ধানি জমি বানিয়ে ফেলছে কিংবা অন্য গাছ রোপণ করছে তাছাড়া রয়েছে রাক্ষুসে ইট-ভাটার রাহুগ্রাসের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুরগাছ বিলুপ্তির পথে।