জেলার খবর, ঢাকা বিভাগ, ফরিদপুর | তারিখঃ নভেম্বর ১০, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3522 বার
সনতচক্রবর্ত্তী: পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ নানা ধরণের জীবিকা বেছে নেয়। তেমনি এক বিচিত্র পেশা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা।
বন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করে পিঁপড়ার ডিম। তাও আবার লাল পিঁপড়ার ডিম। মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে পিঁপড়ার ডিম। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জীবিকার তাগিদে পিঁপড়া ডিম সংগ্রহ করছেন বাশার সেখ। তিনি ৫ বছর ধরে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন।
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ময়না সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে দেখা যায়, এমন এক পেশার মানুষের সাথে। তার নাম বাশার সেখ। বয়স ৪৫ বছর। তিনি খোঁজে বেড়াচ্ছেন লাল পিঁপড়ার ডিম। তার বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার জয়নগর গ্রামে গ্রামে। তিনি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে সংসার চালান।
বাশার সেখ তিনি জানান, সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশিয় গাছ গুলোতেই লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পারে। বড় বাসা থেকে ১’শ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষের দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কের সাথে করতে হয়। এটি সাধারণত মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। ডিম আস্ত না রাখলে মাছ তা খায় না।
বাশার সেখ আরো জানান, লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৮’শ থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকেন। সাধারণ সৌখিন মাছ শিকারীরা তার কাছ থেকে এই ডিম ক্রয় করে থাকেন। এই ডিম মাছেদের খুব প্রিয় খাবার। বরশিতে আটা-ময়দা-পাউরুটি, একানির মতো আধারের সঙ্গে লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম দেয়া হলে বড় মাছেরা সহজে টোপ গেলে। এজন্য যারা সৌখিন মাছ শিকারি বা টিকিট কিনে হুইল বর্ষি দিয়ে মাছ শিকার করে তাদের কাছে পছন্দের টোপ হলো পিঁপড়ার ডিম। পানির নির্দিষ্ট স্থানে আধার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে জেলেদের কাছেও। এই জন্য অনেক সময় জেলেরা তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকেন।
কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। এই কাজে কোনো পুঁজি লাগে না। এজন্য তিনি এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন। সারাদিনে সে এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাতেই চলে বাবা-মা-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাদের ৬ জনের সংসার।