জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ অক্টোবর ৯, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1383 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : গত মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর দেশজুড়ে লোডশেডিং বেড়েছে। একইসঙ্গে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমানও। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে প্রকৃত উৎপাদন ছিল নয় হাজার ২৪১ মেগাওয়াট। আর ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৫৫৯ মেগাওয়াট। এই বিপুল পরিমান ঘাটতির কারণে লোডশেডিংয়ের হার বেড়ে যায়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে গত জুলাই মাসে দেশে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দেশজুড়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ শুরু করা হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তেীফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরে ধীরে ধীরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমতে থাকবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও একই কথা বলেছিলেন। আগস্ট মাসে তিনি বলেছিলেন, সেপ্টেম্বর থেকে লোডশেডিংয়ের পরিমান কমে আসবে। কিন্তুঅক্টোবরে এসে লোডশেডিংয়ের মাত্র আরও বেড়েছে। এমনকি সরকারি ছুটির দিনেও চার-পাঁচ বার করে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়েছে।
লোডশেডিংয়ের কারন জানতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিজিসিবির এক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, গ্যাস এবং তেলের সংকট থাকায় এমনিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। বিশ্বাবাজারে তেল-গ্যাসের দাম এখনো চড়া। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, তেল-গ্যাস আমদানির জন্য যথেষ্ট কমফোর্ট জোন পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তবে বর্তমান লোডশেডিংয়ের কারন হিসেবে গ্রিড বিপর্যয়কে মূল কারন হিসেবে বলছেন পিজিসিবির এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গ্রিডে বিপর্যয়ের পর নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৫ নম্বর ইউনিটের টারবাইনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেফটি বাল্ব ফেটে যায়। কোনো ইউনিট বন্ধ হয়ে গেলে সেটি তাৎক্ষণিক চালু করতে টেম্পারেচারের মাত্রা ঠিক করতে হয়। টারবাইনটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এখন ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন। যাতে সময় লাগবে এক সপ্তাহের মতো।
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সব এলাকা একসঙ্গে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সংস্কার শেষে রাত ৯টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও, একে একে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরো লোডে ফিরে আসতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।
পূর্বাঞ্চল গ্রিডে বিদ্যুৎ না থাকায় দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষকে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। কোনো কোনো এলাকায় এর চেয়েও বেশি সময় অন্ধকারে ছিল।
এর কারণ অনুসন্ধানে গত বুধবার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যায় পিজিসিবি গঠিত ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি। সেদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে তারা ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোলরুম পরিদর্শন করেন। এর পর তদন্ত কমিটি আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিটি। প্রতিবেদন বলা হয়, গত মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ণ অঞ্চলে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি ছিলো এবং পশ্চিমাঞ্চলে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিলো। এসময় পশ্চিমাঞ্চল থেকে ইস্টার্ণ গ্রিডে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিলো। পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়ায় সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়ে যায়।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ‘ট্রিপ’ করলে আশুগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের ২৩০ কেভির দুটো সার্কিট এবং ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪ ও ৫ নং ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মেরামত শেষে ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪ নম্বর ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলেও ৫নং ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রিড বিপর্যয় হলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কোনও ফিজিক্যাল ড্যামেজ পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ কারিগরী ত্রুটিই সিস্টেম ফেইলের মূল কারণ।