আব্দুল্লাহ আল-মামুন, স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ২৯ বছর পর বেনাপোল ইউনিয়নের জনপ্রিয় মেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা শামসুর রহমান হত্যা মামলায় রায় দিয়েছে আদালত। রায়ে ৩ ভারতীয় নাগরিকসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। রোববার বিশেষ দায়রা জজ ও স্পেশাল জজ ( জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ শামছুল হক এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন। শামসুর রহমান বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের পিতা।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, বেনাপোলের গাতিপাড়া গ্রামের ফজলে করিম ক্যানলার ছেলে রাইটার, রবিউল ইসলামের ছেলে মশিয়ার রহমান, দৌলতপুর গ্রামের মোন্তাজ আলীর ছেলে আজগর আলী, ভারতের ২৪ পরগানা জেলার বনগ্রাম থানার ভরতপুর গ্রামের কারজেল মন্ডলের ছেলে আব্দুস সাত্তার মন্ডল, জিয়ালা গ্রামের কালিপদ সরকারের ছেলে সাধন সরকার, বাগদাহ থানার আমডোব গ্রামের মৃত আনু বিশ্বাসের ছেলে ইয়াকুব আলী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা।

নিহতের ভাই বেনাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান জানিয়েছেন, বেনাপোল ইউনিয়নের জনপ্রিয় মেম্বর ছিলেন শামসুর রহমান। বিএনপির সন্ত্রসীদের বোমা হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৯ পরে হলেও এ মামলার রায়ে আসামিদের সাজা হওয়ায় আমরা খুশি। অবিলম্বে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতার করে দণ্ড কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ৫ মে মাগরিবের নামাজ পড়ে শামসুর রহমান বাড়ির বাংলা ঘরে বসে লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন। রাত পোনে ৮টার দিকে আসামিরা মেম্বর শামসুর রহমানের সাথে দেখা করার কথা বলে বারান্দায় উঠে তাকে লক্ষ্য করে পরপর দুইটি বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে শামছুর রহমান মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে গিয়াসউদ্দিন বাদী হয়ে শার্শা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে আটক আসামিদের দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মনোয়ার হোসেন। অভিযুক্ত আসামিরা হলো, সাধন সরকার, আব্দুস সাত্তার মন্ডল, জাফর মন্ডল, মোশারেফ হোসেন, সামছুর রহমান ওরফে ঢ্যাঙ্গা শামছু, রাইটার, আজিজুল সরদার, লিয়াকত, মশিয়ার রহমান, মনির হোসেন, ইয়াকুব আলী, আজগর আলী, ইছাহাক মিয়া, টিটু মিয়া ও মাজেদ।

পরবর্তীতে মামলার সাক্ষী চলাকালে জাফর মন্ডল, মোশারফ হোসেন, সামছুর রহমান ওরফে চ্যাংগা শামছু, আজিজুর রহমান, লিয়াকত, মশিয়ার রহমান, মনির হোসেন, ইছাহক মিয়া ও মাজের মৃত্যু হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি রাইটার, সাধন, সাত্তার মন্ডল, ইয়াকুব আলী, আজগর আলী ও মশিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জারিমানার আদেশ দিয়েছেন। হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামি টিটু মিয়াকে রায়ে খালাস দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত রাইটার বাদে সকল আসামি পলাতক রয়েছে।