নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ রবিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন।

গত দুই বছর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মানুষ স্বস্তিতে উদযাপন করতে পারেনি করোনা মহামারির কারণে। এবার ঈদুল আজহার প্রাক্কালে দেশে করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার—দুটিই বাড়ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বছর ঘুরে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।

এবার কোরবানির ঈদ এমন এক সময় এল, যখন দেশের একটা অংশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বন্যায় দুর্গত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সবকিছুরই ছায়া পড়েছে এবারের সাধারণ মানুষের ঈদ আনন্দে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি জামাত হবে। সকাল ৭টায়, ৮টায়, ৯টায়, ১০টায় এবং সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে এসব জামাত হবে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি জীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান আল্লাহর নিকট কুরবানি কবুল হওয়ার জন্য শুদ্ধ নিয়ত ও বৈধ উপার্জন থাকা আবশ্যক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আল্লাহ বিপদে মানুষের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। এসময় সবাইকে অসীম ধৈর্য নিয়ে সহনশীল ও সহানুভূতিশীল মনে একে অপরকে সাহায্য করে যেতে হবে। পাশাপাশি আমি এই মহামারিতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করার অনুরোধ জানাই।

ঈদের নামাজের পর পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদ উদযাপন। মহান আল্লাহর প্রতি প্রিয় বান্দা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাঈলের (আ.) সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা এবং গভীরতম আত্মসমর্পণে পরম করুণাময় সন্তুষ্ট হন এবং তিনি ইব্রাহিমকে (আ.) আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ পশু কুরবানি করার নির্দেশ দেন।

এ ঘটনার পর থেকে মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হিসেবে পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন। প্রতি বছর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র হজের পরই দেওয়া হয় কোরবানি। পাঁচ দিন ধরে চলে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সৌদি আরবে শনিবার উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেই শনিবার ঈদ উদযাপন হয়।

কুরবানির মূল কথা হলো ত্যাগ। সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দিয়ে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মধ্যে এর মাংস বিতরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।

স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আযহা উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে, প্রত্যেককে নিজ বাসা থেকে অযু করে ঈদগাহে এবং মসজিদে আসতে বলা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে, ঈদগাহ ও মসজিদের অযুখানায় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ঈদের জামাতে অংশ নেয়ার সময় প্রত্যেককে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং কেউ ঈদগাহ বা মসজিদে রাখা টুপি বা জায়নামাজ ব্যবহার করতে পারবেন না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময়, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং অবশ্যই এক সারি খালি রেখে নামাজের জন্য দাঁড়াতে হবে।”

নির্দেশনা বাস্তবায়নে করতে খতিব, ইমাম, মসজিদ পরিচালনা কমিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।এছাড়া, ঈদের দিন পশু কোরবানির জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করতেও, জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।