সারাবিশ্ব | তারিখঃ অক্টোবর ১৬, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1064 বার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নওর গিলন বলেছেন বহু ভারতীয় তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এবং এজন্য তিনি বেশ আপ্লুত। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, হামাসের সঙ্গে তার দেশের চলমান যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বহু ভারতীয় ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
গিলন বলেন এত সংখ্যক ভারতীয় এই যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়েছেন যা দিয়ে আরও একটা বাহিনীই বানিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু এত সংখ্যক ভারতীয় কেন যুদ্ধে যেতে চাইছেন বা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন? অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নওর গিলন বলেছেন, আমার কাছে এটা খুবই আশাপ্রদ ঘটনা এবং খুবই আবেগের ব্যাপার। শনিবার যখন পুরো চিত্রটাই পরিষ্কার হয়নি সে সময়ই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে আমরা যে পরিমান সমর্থন পেয়েছি তা ভুলবার নয়। তিনি বিশ্বের নেতাদের মধ্যে একজন, যিনি খুব স্পষ্ট ভাষায় নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছেন। এটা আমরা কখনোই ভুলব না।
ভারতের মন্ত্রী, বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তিনি সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন গিলন। এই সাক্ষাতকারেই তিনি বলেছেন, এটা ছবির একটা দিক। সামাজিক মাধ্যমেও এর প্রভাব দেখুন। খুবই আশ্চর্যজনক। সবাই আমাকে বলছে যে, আমি স্বেচ্ছাসেবক হতে চাই এবং আমি ইসরায়েলের পক্ষে লড়াই করতে চাই। এই শক্তিশালী সমর্থন নজিরবিহীন।
ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার পর থেকেই অনেক ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী পোস্ট করছেন যে, তারা ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চান। ভারতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক্স-হ্যান্ডেলকে ট্যাগ করে যারা সমর্থন করছেন, তার মধ্য থেকে কিছু আবার রাষ্ট্রদূতের এক্স হ্যান্ডেলে রিপোস্ট করা হচ্ছে, ধন্যবাদও জানানো হচ্ছে।
অনেকেই আবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়ে ইসরায়েলের পতাকা তুলে ধরে তাদের প্রতি সমর্থনের ডাক দিচ্ছেন। বিশ্বকাপের মাঠ থেকে এরকম কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করা হয়েছে।
এই সব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অন্যান্য পোস্ট দেখলে আন্দাজ পাওয়া যায় যে এদের একটা বড় অংশই হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিমবিরোধী। সেকারণেই কি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে চাইছেন তারা?
যেমন হামাসের হামলার পরেই যার পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে তিনি নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে দাবী করা চন্দন কুমার শর্মা। সামাজিক মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার আদেশ দিলে ভারতের প্রতিটি জাতীয়তাবাদী হিন্দু ইসরায়েলে গিয়ে তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করবে।
তারপর থেকে এ ধরনের আরও পোস্ট দেখা যাচ্ছে। বিজেপি নেতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলেন অনেকে ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চাইছে আর তারা হিন্দুত্ববাদের অথবা বিজেপি সমর্থক কি না, তা নিয়ে তার দল এখনই কোনো মতামত দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি বলতে পারি যে, ইসরায়েলের পাশে যে বহু ভারতীয় দাঁড়াচ্ছেন তার দুটি দিক আছে। প্রথমত হামলার ভয়াবহতার যে ছবি দেখা গেছে, সেটা বিশ্বের বহু দেশের সঙ্গে ভারতের নাগরিকদেরও নাড়িয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত ইহুদীদের প্রতি ভারতীয়দের একটা সহানুভূতিও আছে।
তার দাবি, গত শতাব্দীতে ইসরায়েলিরা নাকি বেশি অত্যাচারিত হয়েছে। আবার ভারত এবং ইসরায়েল দুটিই সুপ্রাচীন সভ্যতা। সেদিক থেকেও ভারতের মানুষদের একটা বড় অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।
এদিকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষজ্ঞ অশ্বিনী কুমার মহাপাত্র বলেন, হামাস নিজেদের লড়াইটাকে ইসলামের লড়াই হিসেবে তুলে ধরেছে। আর সে কারণেই হিন্দুত্ববাদীরা ইসলামবিরোধী জায়গা থেকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
হামাস আর ইসরায়েলের লড়াইতে ভারতীয়রা দুইভাগ হয়ে গেছেন। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম বিরোধিতার কারণে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। আবার মুসলমানরা হামাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
যদিও অনেক দশক ধরে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষেই থেকেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বর মাসে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোট রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। আবার আগামী বছর রয়েছে লোকসভা নির্বাচন।
তার আগে বিজেপি হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক আরও সংগঠিত করতে হিসাব কষেই ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে মন্তব্য করছে বারবার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও হামাসের প্রথম হামলার দিনেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে ভারত ইসরায়েলের পাশে থাকছে। ওই মন্তব্যে কোথাও ফিলিস্তিন বা হামাসের নাম ছিল না।
মোদীর ওই মন্তব্যের ছয়দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ঐতিহাসিকভাবেই তারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে এসেছে এবং সেই নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আরব বিশ্বের কাছে ভারতের অবস্থান যাতে স্পষ্ট হয়, সেজন্যই সরকারিভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর পুরোনো অবস্থান আবারও জানানো হলো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডো ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এরা যে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে চাইছে, এরা জানে বুলেট কী? তার মতে, যুদ্ধে যেতে চাই ইত্যাদির কোনো অর্থ হয় না। এই যুদ্ধে মিসাইল, রকেট ব্যবহৃত হচ্ছে। তার মুখে দাঁড়াতে পারবে এরা? সামাজিক মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক-ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছে এরা। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ করার যদি শখই থাকে, তাহলে সেনাবাহিনীতে তো অগ্নিবীর নেওয়া হচ্ছে। তাহলে ভারতীয় বাহিনীতেই যোগ দিতে পারত।