স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের ঝিকরগাছার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের শিওরদাহ গ্রামে প্রবাসীর সংসার ভেঙে এক সন্তানের জননীকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেন শিওরদাহ বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট শাখার পরিচালক সোহরাব হোসেন পিন্টু। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে সন্তানের দিকে তাকিয়ে প্রবাসী স্বামী তার বউ ফেরৎ নিতে চাইলেও সমাজের অনেক বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে দাবী করেছেন প্রবাসী স্বামী। অপর দিকে নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী আনোয়ারুল ইসলাম প্রভাবশালীর ফোন পেয়ে তালাক রেজিষ্ট্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে শিওরদাহ মাঝেরপাড়া গ্রামের মৃত মনসের আলীর ছেলে ইমামুল হোসেন (৩৮) ২০০৮ সালে প্রবাসের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। প্রবাসে যাওয়ার পূর্বে তিনি একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে হাসিয়ারা খাতুন হাসি (৩৬) কে বিবাহ করেন এবং তাদের কোল জুড়ে একটি ছেলে সন্তান আসে। বর্তমানে ছেলেটি ৯ম শ্রেণির ছাত্র। ২০১৬ সালে হাসির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন পার্শ্ববর্তী আশিংড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সোহরাব হোসেন পিন্টু (৪৮)। পিন্টুও এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। পিন্টু হাসির সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে তুলে যশোরের বারান্দীপাড়ার কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে অচেনা এক ব্যক্তিকে স্বাক্ষী বানিয়ে বিগত ১০ এপ্রিল তার প্রবাসী স্বামী ইমামুলকে তালাক করিয়ে দেন এবং ০৫ আগস্ট ২ লক্ষ টাকা দেন মোহরের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যে যার বাড়িতে চলে যান। এদিকে হঠাৎ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রবাসী স্বামী ইমামুল ২২ আগস্ট বাড়িতে চলে আসে। তখন হাসি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে পরিবারের মধ্যে অশান্তি শুরু করে এবং হাসি তার এলাকার একজনের নিকট বলেন আমি ইমামুলকে তালাক দিয়েছি এবং পিন্টুকে বিবাহ করেছি। এই কথা এলাকায় প্রচার হলে হাসির পিতা তাকে আনতে ২৩ আগস্ট জামাই বাড়িতে যান। তখন মেয়ে বলে তুমি বাড়ি যাও আমি আসছি এই বলে পিন্টুর সাথে চলে যায়। ঘটনার এক পর্যায়ে ২৪ আগস্ট রাতে স্থানীয় ভাবে বসে উভয় পক্ষের মধ্যে মিমাংসা করে পিন্টু ও হাসির বিবাহ বিচ্ছেদ করে দেন নির্বাসখোলা ইউনিয়নের কাজী অফিসের সহকারী। এরপর প্রবাসী ইমামুল হাসিকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের বিষয়ে এলাকার লোকজন কানাঘুঁষা করতে থাকে ঐ বউ নিতে হলে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। একথা হাসির পিতার কানে গেলে ২৫ আগস্ট সকালে সে তার মেয়েকে জামাই (ইমামুল) এর বাড়ি হতে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে বিকালে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনার বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে হাসির পিত্রালয়ে গেলে নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী আনোয়ারুল ইসলামকে তাদের বাড়ি হতে বের হতে দেখা যায়।

কাজীর উপস্থিতির বিষয়ে হাসির পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজী এসেছিলেন আমার মেয়ে যেন আবার পিন্টুর নিকট চলে যায় সেটা বলতে। এছাড়াও তিনি বলেন, পিন্টু আমার মেয়ের নিকট থেকে ১ জোড়া কানের দুল, ১ জোড়া হাতের রুলি এবং নগদ ১লক্ষ ৮০হাজার টাকাসহ আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে। আমার মেয়ের সোনার সংসার নষ্ট করেছে আমি প্রশাসনের নিকট এর সঠিক বিচার চাই।

প্রবাসী ইমামুল হোসেনের স্ত্রী হাসিয়ারা খাতুন হাসি বলেন, আমি রাতে ওদের (ইমামুল) বাড়িতে ছিলাম। তার পরিবারের অন্য সদস্যরা আমাকে দুই বার বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যেতে বলেছে। আমি তাদেরকে বলেছিলাম সকালে চলে যাবো। পরবর্তীতে সকালে আমার পিতার সাথে বাড়িতে চলে এসেছি।

প্রবাসী ইমামুল হোসেন বলেন, আমরা কেউ ভূলের উর্ধ্বে নই, মানুষ ভূল করে। যা হোক আমার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সব কিছু মেনে নিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চাই।

পরকীয়া প্রেমিক ওরফে দ্বিতীয় স্বামী সোহরাব হোসেন পিন্টুর নিকট হাসি কি হয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ও আমার স্ত্রী। তখন হাসির একটা সন্তান ও তার দুইটা সন্তার থাকা অবস্থায় প্রবাসী ইমামুলের ঘর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আমার ভূল হয়েছে।

নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষ মিলে কথাবার্তা ও লেখা লিখি হয়। আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলেছে তালাকটা যেন রেজিষ্ট্রি না করি। তাই আমি তালাক রেজিষ্ট্রি করিনি। কিন্তু হাসির পিত্রালয় গিয়ে হাসিকে পিন্টুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমরা লিখিত কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।