জাতীয় | তারিখঃ জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2360 বার

গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ফের বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের বড় ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি ১০ কোটি টাকার বেশি অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে না। একইসঙ্গে নগদ আদায় না করে পুরোনো ঋণ নবায়ন করতে পারবে না ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ২২ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের মে মাসেও অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংকে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সমঝোতা স্মারকের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেগুলেটরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, এখন থেকে কৃষিঋণ, সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত চলতি মূলধন ও সিএমএসএমই ঋণ, ভোক্তা ঋণ (গৃহ নির্মাণ ঋণ, রিটেইল ক্রেডিট, ক্রেডিট কার্ড, এসওডি, ইত্যাদি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ঋণ, শতভাগ নগদ মার্জিনের বিপরীতে ঋণপত্র ও অন্যান্য পরোক্ষ ঋণসুবিধা ছাড়া অন্য কোনো ঋণসুবিধা দেওয়া যাবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ বা সীমাতিরিক্ত বকেয়া স্থিতি নগদ আদায় করা ছাড়া গ্রাহকের বিদ্যমান ঋণসুবিধা নবায়ন করা যাবে না।
এদিকে, গত ১৮ জানুয়ারি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেন পদত্যাগপত্র জমা দেন। বৃহস্পতিবার থেকে তিনি অফিস করছেন না। তার এমডি পদে মেয়াদ ছিল আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নানা অনিয়মের কারণে দুই বছর ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিচালকরা তাদের পছন্দের গ্রাহকদের ঋণ দিতে চাইছেন। জোর করে ঋণ পর্ষদে তুলছেন। মেহমুদ হোসেন এসব কাজে রাজি ছিলেন না। পর্ষদের প্রভাবশালী দুই পরিচালকের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না তার। তাই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
জানা গেছে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াসহ নানা সংকটের মধ্যে ব্যাংকটি চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে। এর ফলে ন্যাশনাল ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বেশকিছু সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) অর্থ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি।
এ জন্য জরিমানাও গুনতে হয়েছে। এছাড়া চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ঋণ নবায়ন করা হয়। সেদিনই গ্রাহক ব্যাংক থেকে ২২ কোটি টাকা তুলে নেন। এরপর আরও কয়েকজন গ্রাহকের ঋণ প্রস্তাব পর্ষদে পাঠানোর জন্য এমডির ওপর চাপ তৈরি করা হয়। এতে এমডি রাজি না থাকায় পদত্যাগের পথ বেছে নেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি। যা বিতরণ করা ঋণের ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।
Leave a Reply