সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি : পহেলা পৌষের কুয়াশাঢাকা ভোর। সেই কুয়াশা ভেদ করে উদিত হয়েছে নতুন সূর্য। বিজয় দিবসের সেই রক্তিম সূর্যোদয়ের পর থেকেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল নামে। বিজয়ের ৫১তম বছর উদযাপন উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি।

শুক্রবার সকাল ৭টার পর সর্বসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ এলাকা উন্মুক্ত করে দেয়ার পরেই এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সকল শ্রেণি-পেশা ও বয়সের লাখো মানুষ।

এর আগে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় এক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে নীরবতা পালন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। পাশে বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল।

এরপর জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিন বাহিনীর প্রধান।

পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তার পাশে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাছান মাহমুদসহ আরও অনেকে।

এদিকে ভিআইপি যাতায়াতের কারণে ফজরের আগ থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

সকাল পৌনে ৭টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর মহাসড়ক এবং স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে প্রবেশ করেন স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।

রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সমাজকর্মী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরে, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার পুষ্পাঞ্জলিতে ঢেকে যায় সৌধের শহীদ বেদি।

এসময় অনেককেই দেখা গেছে দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নিজেদের কণ্ঠ মেলাতে। শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে তাদের হাতে ছিল নানা রঙের, নানা বর্ণের ফুল। আবার অনেকেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নীরবতা পালন করেন। সময় যত গড়াচ্ছে, মানুষের ভিড় বাড়ছে।

বন্ধুদের সঙ্গে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরিদুর রেজা খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রতিবছরই এ দিনটিতে ফুল নিয়ে স্মৃতিসৌধে আসি মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে। তাদের আত্মত্যাগেই আমরা অর্জন করেছি একটি স্বাধীন দেশ।’

বিজয়ের দিনে কেমন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশই আমার একমাত্র চাওয়া। আত্মমর্যাদাশীল যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমিও তাই দেখি। পাশাপাশি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে পণ করি নিজেকে তাদের আদর্শে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে।’

বিজয়ের ৫১তম বছরে বাংলাদেশের কাছে কী প্রত্যাশা জানতে চাইলে ধামরাইয়ের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শাহ মো. সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই ৫১ বছরে অর্থনীতি ও সামগ্রিক উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশ থেকে শ্রেণি বৈষম্য এবং দুর্নীতি পুরোপুরিভাবে দূর হয়নি। বঙ্গবন্ধুর এ দেশে প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে এটাই আমার এবারের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের কাছে কামনা।’