জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ নভেম্বর ১৫, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3331 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রত্যেক সদস্য স্কুলের সব শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবককে মাদকের বিষয়ে সচেতন করবে এবং সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।
সারা দেশের ৩১ হাজার ১৭৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১ হাজার ৮০টিতে গঠন করা হয়েছে এই মাদক নিরোধ কমিটি। বাকি ৯৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচিরেই গঠন করা হবে বলে জানায় এই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
মাদকবিরোধী আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচির আওতায় এসব কার্য পরিচালনা করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, ঢাকা বিভাগের ৪ হাজার ৯২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সব কটিতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৮৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৮টির, বাকি রয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠন।
রাজশাহী বিভাগে ৫ হাজার ১১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গঠন করা হয়েছে সব কটিতে। খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ৪৯৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও গঠন হয়েছে কমিটি। বরিশালে ৩ হাজার ১৮টি প্রতিষ্ঠানের সব কটিতেই কমিটি গঠন হয়েছে। সিলেটেও ১ হাজার ৪৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবক’টিতে কমিটি গঠন হয়েছে।
রংপুর বিভাগে ৪ হাজার ৮০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪ হাজার ৭০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ময়মনসিংহ বিভাগে ২ হাজার ৪৮৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেষ হয়েছে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের কাজ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (নিরোধ) মো. মনজুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাদকের ভয়াবহতা ঠেকাতে নানা ধরনের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এসব কমিটির কার্যক্রম তদারকি করবেন। এ কমিটি মাদকের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তুলে ধরবে এবং মাদক প্রতিরোধে স্কুল থেকে তারা নিজেদের আরও সচেতন করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন করে মেন্টর তৈরি করেছি। তারা হলেন শিক্ষক। তারা নিজেদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে মাদকের ভয়াবহতাগুলো তুলে ধরবেন। মাদক থেকে দূরে রাখতে এই কমিটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কিশোর ও তরুণ বয়সে কেউ যেন মাদকের দিকে ঝুঁকে না পড়ে।’
মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রম
সংস্থাটি বলছে, মাদকবিরোধী প্রচারকার্যের অংশ হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর পোস্টার লিফলেট স্টিকার বিতরণ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সভা সেমিনার শ্রেণি বক্তৃতার আয়োজন করা হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনমানুষের সচেতনতা দিন দিন এই প্রচারণার কারণে বাড়ছে।
প্রচার কাজের ধারাবাহিকতায় মাদকবিরোধী ফেস্টুন তৈরি, বিতরণ, মাদকবিরোধী লিফলেট বিতরণ, স্টিকার বিতরণ, মাদকবিরোধী আলোচনা সভা-সেমিনার, স্কুল-কলেজে মাদকবিরোধী বক্তৃতা, স্যুভিনিয়র প্রকাশ ও বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন, উপজেলাভিত্তিক মাদকবিরোধী ভলান্টিয়ার টিম গঠন, সোশাল মিডিয়ায় মাদকবিরোধী ফিলার ও ডিজিটাল কনট্যান্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে মাদকবিরোধী প্রশিক্ষণ মেন্টর তৈরি, জ্যামিতি বক্স মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন, ডিজিটাল ভ্যানে মাদকবিরোধী প্রচারসহ নানা ধরনের কার্যক্রম।
সোশাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটভিত্তিক কার্যক্রম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বিশেষ করে তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত। তাই জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। যেকোনও ব্যক্তি তার মতামত অভিজ্ঞতা পরামর্শ অধিদফতরের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারছে, যা সহজে কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে এবং ফেসবুকে সংযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা তা জানতে পারছে। ফলে যেকোনও তথ্য দ্রুত ফেসবুকে সংযুক্ত সবার মাঝে প্রচার হচ্ছে।
ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে মাদকবিরোধী কার্যক্রম
ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মাদক আগ্রাসন ঠেকাতে। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে জুমার নামাজের খুতবার আগে মাদকবিরোধী বয়ানের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইমামদের প্রশিক্ষণ মডিউলে মাদকবিরোধী কী ধরনের বক্তব্য বা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং মসজিদে মাদকবিরোধী আলোচনার বিষয় ও কৌশল নির্ধারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে।