সারাবিশ্ব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক বিচিত্র চরিত্র রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে কি তিনি আবার হোয়াইট হাউসের দখল নেবেন? নির্বাচনের ফলাফলেই মিলবে সেই উত্তর। খবর রয়টার্সের।

যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান, তবে তার জীবনে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। যেতে হতে পারে জেলে। জিতলে অবশ্য তিনিই ‘বাজিগর’।

শুধু প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নয়, ট্রাম্পের কাছে এই নির্বাচনের গুরুত্ব ‘অন্য’ জায়গায়। ক্যাপিটল হিলে হামলায় উস্কানি থেকে পর্ন তারকাকে ঘুষ, আয়কর জালিয়াতি, বিচারব্যবস্থার ওপর অবৈধ ভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দেয়া উপহার সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়া আমেরিকার ফেডারেল আদালতে মোট ৩৪টি মামলায় অভিযুক্ত ট্রাম্প।

গত ৩১ মে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগই প্রমাণিত বলে ফেডারেল আদালতের ১২ সদস্যের জুরি জানিয়েছিলেন! দোষী সাব্যস্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টকে সাজা শোনানো হয়নি।

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের আইনজীবীরা বার বার আদালতের কাছে সাজা ঘোষণার দিনক্ষণ পিছোনোর আবেদন করেন। আবেদন মেনে বার কয়েক সেই তারিখ বদলানোও হয়।

শেষ দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী, ফৌজিদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা হতে পারে ২৬ নভেম্বর। অর্থাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন ২০ পর। সাজা ঘোষণার আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে ট্রাম্পকে। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। তিনি জিতলে, ইতিহাসে প্রথম ‘অপরাধী’ প্রেসিডেন্ট পাবে আমেরিকা। আইনজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তার বিরুদ্ধে ওঠা ফৌজিদারি মামলা স্থগিত হয়ে যেতে পারে। তবে হারলে আবার আইনি লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে ট্রাম্পকে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলকে সাজার হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন পন্থা নিতে পারেন। আবার শুনানির আর্জিও করা হতে পারে।

আমেরিকার আইন অনুযায়ী, ট্রাম্পের জেল বা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দু’টি সাজাই হওয়ার কথা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে ৫ নভেম্বরের ফলাফলের ওপর। ট্রাম্পের প্রচার অভিযানের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং জানিয়েছেন, ব্যালট বাক্সে জয়ী হবেন ট্রাম্পই!

আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। পর্নতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পরে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তার মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই টাকা দেয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক সংস্থার নথিপত্রে জালিয়াতি করেছিলেন। সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাকে। নভেম্বরের শেষ দিকেই হয়তো সাজা ঘোযণা হতে পারে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনে ফলাফল নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয়। ফের প্রেসিডেন্ট হলে, প্রথমেই অ্যাটর্নি জেনারেল স্মিথকে বরখাস্ত করবেন বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে মামলার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে।

২০২০ সালের নির্বাচনে টান টান লড়াইয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের জর্জিয়া অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল। তবে সেখানকার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক এখনো জারি রয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সেখানকার ফলাফলে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে। যদিও সেই মামলা আপাতত স্থগিত।

ফৌজদারি মামলা ছাড়াও একাধিক দেওয়ানি মামলাতেও নাম জড়িয়েছে ট্রাম্পের। নিউ ইয়র্কের আদালতে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অধিকৃত সম্পত্তির মামলা চলছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেআইনি ভাবে ৩০ কোটি ডলারের সম্পত্তি করেছিলেন ট্রাম্প, এই অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্য তার জেল হবে না, দিতে হবে জরিমানা।