রাজনীতি | তারিখঃ অক্টোবর ২৭, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 10486 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে কিনা তা দেশের আদালত ও জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দীন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, অনেকে বলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নাকি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। আমি বলি ঐতিহ্যের অর্থ কী? ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ তো স্বাধীনতা হরণকারী, গণহত্যাকারী দল। ছাত্রলীগ তো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে কিনা তা দেশের আদালত ও জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে স্বাধীনতা হরণ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা যদি ঐতিহ্যের হয় তাহলে আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে তো খুনখারাবি, ধর্ষণ, ভোট ডাকাতি। বাংলাদেশে প্রথম ভোট ডাকাতির ইতিহাস ডাকসু নির্বাচনে। ১৯৭৩ সালে ভোট ডাকাতি করে সেসময় ছাত্রলীগ কালো নজির স্থাপন করেছিল। পঁচাত্তরে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিকারী আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি মাত্র ১৩ মিনিটে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা রূপ দেওয়া ও গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার নাম আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের সঙ্গে আতাঁত করে ভারতের কাছে তথাকথিত শান্তিচুক্তির নামে ভূখণ্ড সারেন্ডার করার পাঁয়তারা করেছে এই আওয়ামী লীগ। যেটার কারণে আজও আমরা ভুগছি।
তিনি বলেন, মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে মারা, লাশের ওপরে দাঁড়িয়ে নৃত্য করার ঐতিহ্য শুধু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগেরই আছে। অধিকারের তথ্য বলছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের হিসেব বাদেই আওয়ামী লীগের শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) ৭ হাজার ১৮৮ জন মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে গুমের শিকার হয়েছেন ৭০৯ জন। এরমধ্যে ১৫৫ জন এখনো ফিরে আসতে পারেননি। আমি হয়ত সৌভাগ্যবান ফিরতে পেরেছি। তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে জানি না। যারা ফিরেছেন তারা তো লাকি।
তিনি আরও বলেন, সেই আওয়ামী লীগই যদি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হয় তাহলে রোমানিয়ার ফ্যাসিস্ট সরকার দলও ইতিহাসে তো ঐতিহ্যবাহী হওয়ার কথা, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজ দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে তারাও তো ঐতিহ্যবাহী হওয়ার কথা। সেটা হয়নি, সংগত কারণে আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জনদাবি উঠেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। সেটা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য, প্রতিক্রিয়া নেই। প্রতিক্রিয়া নেন দেশের মানুষের কাছে। যে কারণেই করুক ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের ফল মানুষ খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। গণহত্যা চালানোর পর বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার আর আওয়ামী লীগের আছে কি-না সে প্রশ্নের ফায়সালা জনগণই ঠিক করবে। সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক দল বা সরকার যদি গণহত্যায় জড়িত হয় তাহলে শুধু ব্যক্তি বা নেতা নয়, পুরো দলই তো বিচার করতে হবে। আইন সেটাই বলে। আইন অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হবে, আদালত সেটার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক সেটার অধিকার আমরা নিতে চাই না, জনগণই ঠিক করবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আজকে অনেক ধরনের সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে, বিপ্লবোত্তর ফসল কারা নিতে চায়, নষ্ট করতে চায়। রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক সংকট তৈরি পেছনে কারা কাজ করছে, ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করতে হবে। সংকট যাতে না হয়, সেজন্য ফ্যাসিবাদ ও দোসরদের সুযোগকে নস্যাৎ করে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ১২ দলীয় জোট প্রধান, সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাবি ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সদস্য সচিব রাশেদ খান।