নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি। দলটি মনে করে অন্তবর্তী সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার হবে নির্বাচন।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপ শেষে একথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রথম দল হিসেবে বিএনপি যোগ দেয়। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে দলটির ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন। অন্যরা হচ্ছেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ।

বিএনপির সঙ্গে দুপুর আড়াইটা থেকে এক ঘন্টা বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপে বসেন। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দলটির নেতৃত্বে দেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, `বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায় সেকথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা বলেছি যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি।২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনারসহ ছিলো তাদেরকে ভুয়া ও ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।‘

মির্জা ফখরুল বলেন, `উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদেরকে বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান উনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।‘

বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, `বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন আমাদের দাবিগুলো জনগনের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।‘

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বা্বধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা‘ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহনের দা্বি জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর কর্মরত আছেন জানিয়েছে তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিযোগ বাতিল, ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের কথা বলেছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দুই একজন আছেন যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিট তাকে ব্যাহত করছে তাদেরকে সরানো কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।

বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, আামরা বলেছি যে, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই ছিলো দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তৈবিয়তে কাজ করছেন এখনো। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একই সঙ্গে অতিদ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছি।

তিনি বলেন, `আমরা লক্ষ করেছি যে, যাদেরকে অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে…দুর্নীতি অথবা হত্যায় সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদেরকে দেখতে পারছি যে, জামিন দেয়া হচ্ছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি।‘

`২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে সকল মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছি।‘

দেশ ছেড়ে কিভাবে পালাচ্ছে:

মির্জা ফখরুল বলেন, `শুনতে পাই, কিছু জায়গায় সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কিভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি।‘

`আজকে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যে সমস্ত ক্যাম্পেইন চলছে, যে সমস্ত অপপ্রচার চলছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি তারা যেন ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে।‘

পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতার সৃষ্টি পেছনে কারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন এবং গুম-খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

`জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। সেই দলকে যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জড়িত আছেন তারা জাতিসংঘের টিমকে সেইভাবে সহযোগিতা করছে না। বিষয় আমরা বলেছি।‘

দূর্গা পূজা প্রসঙ্গে:

মির্জা ফখরুল বলেন, `সম্প্রতি দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, সনাতনী কিছু মানুষ… সবাই না তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগনকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছে যা সর্বব্যৈ মিথ্যা। এটা তাদের সূদূর পরিকল্পনা তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা বলেছি। এই কথাগুলো গুরুত্বের সাথে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।‘

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে গত ৭ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস দায়িত্ব নেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এটি তৃতীয় দফা সংলাপ। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন অন্তবর্তী সরকার প্রধান।