জেলার খবর, সিলেট, সিলেট বিভাগ | তারিখঃ জুন ১৮, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5618 বার
সিলেট প্রতিনিধি : ভারত থেকে আসা উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
জেলার তিনটি নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া আরও কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। পানিতে বাসা-বাড়ি ও সড়ক ডুবে যাওয়ায় নগরবাসীর ঈদ-আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে। পশু কোরবানিও দিতে পারেননি অনেকে।
মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার ১৮ জুন সকাল থেকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টের বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও ছাতক পয়েন্ট ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে, সিলেটের সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ও একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে সুনামগঞ্জের পৌরশহরের পশ্চিম তেঘিরয়া, সাহেববাড়ি ঘাট, পশ্চিম বাজার, মাছবাজার, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর পয়েন্ট, নবীনগরসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করেছে।
এছাড়াও জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলার শতাধিক অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পড়েছেন বাসিন্দারা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীর পানি বাড়ার কারণে ১৩টি উপজেলায় মোট ৫৩৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ১৩টি উপজেলায় একলাখেরও বেশি মানুষ বন্যার পানিতে আক্রান্ত হলেও বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩০০ জনের মত।তবে এই সংখ্যা আজকে আরো বাড়তে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টিপাত আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে এবং নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশকিছু পরিবার এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে সোমবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমায় সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতাও কমতে শুরু করেছে।
পাউবো সিলেটের তথ্যমতে, কুশিয়ারা নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। এই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় তা আরও বেড়ে ৭৯ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। সারিগোয়াইন নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টায় তা আরও বেড়ে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছড়া ও ধলাইসহ সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৩ মিলিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৪ মিলিমিটার। অন্যদিকে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে দেশটির আবহাওয়া অফিস।