জেলার খবর, রংপুর, রংপুর বিভাগ | তারিখঃ জুন ১৬, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 11010 বার
রংপুর জেলা প্রতিনিধি : বন্যার পূর্বাভাসে ঈদ আনন্দ ফিকে হতে যাচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে ভারী বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছে পৌঁছেছে।
পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে শুক্রবারেই তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু গতরাতেও সিকিমে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।
এতে করে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ, তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি।
ফলে শনিবার বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বার্তা দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ইতোমধ্যে সিলেটে সুরমার পানি কানাইঘাটে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল (উচ্চতা, যার ফলে নদী তীরবর্তী সমতল ও ফসলী এলাকা তলিয়ে যায়) বাড়ছে, যা আগামী মঙ্গলবার (১৮ জুন) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য বলছে, আজ শনিবার সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ছিল বিপৎসীমার মাত্র তিন সেন্টিমিটার নিচে। ডালিয়া পয়েন্টেও মাত্র তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীর পানি প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই দিন সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, সর্দারপাড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, পাটিকাপাড়া, সিংগীমারী এবং সিন্দুর্না ইউনিয়ন এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, আগামী ৫ দিনে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী এবং কিছু স্থানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ইত্যাদি নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর কিছু পয়েন্টে স্বল্প মেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী তিনদিন (রবি, সোম, মঙ্গল) দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এই সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা, ঝালুখালী নদীসমূহের পানির সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে এবং কতিপয় স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পাউবো জানিয়েছে, ভারতের জাফলংয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য স্থানেও ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, আসামের চেরাপুঞ্জিতে ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
দেশে ও দেশের বাইরে বৃষ্টিপাত বাড়ায় শনিবার পাউবোর পর্যবেক্ষণাধীন ১১০টি স্টেশনের মধ্যে ৫৬টিতে পানির সমতল (উচ্চতা) বেড়েছে, কমেছে ৪৭টিতে। অপরিবর্তিত আছে মাত্র সাতটি স্টেশনে।