জেলার খবর, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ বিভাগ | তারিখঃ ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2117 বার
বিল্লাল হোসেন, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় বিনা বেতনে ২৩ বছর শিক্ষকতার পর এমপিও তালিকা থেকে রহস্যজনক ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে শাহিনা আক্তার নামে এক শিক্ষিকাকে। ঘটনাটি উপজেলার মল্লিকবাড়ি গোবুদিয়া সবুজ বাংলা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন (নম্বর ২৯৭৫/২৩) করা হলে কর্তৃপক্ষকে দুই মাসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ভূক্তভোগী ওই শিক্ষিকা।
রিটপিটিশন, ভূক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মল্লিকবাড়ি গোবুদিয়া গ্রামে স্থানীয়ভাবে ১৯৯৮ সালে সবুজ বাংলা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গোবুদিয়া গ্রামের শামছুল হক খানের ছেলে আবুল বাশার মো: আইয়ূব খান। কিন্তু দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি এমপিও না হওয়ায় ২০১৩ সালে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহিনা আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে তিনি চাকরী নিয়ে ওমান চলে যান। দীর্ঘ পাঁচ বছর বিদেশ কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি দেশে চলে আসেন। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত হলে ওমান ফেরত সাবেক প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে না নিয়ে গোপনে নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করে মনগড়াভাবে একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। অপরদিকে শাহিনা আক্তারকে এমপিও’র তালিকা থেকে বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই পদে রায়হানা খাতুন নামে তার এক আত্মীয়কে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে এমপিও তালিকাভূক্ত করেন।
ভূক্তভোগী শিক্ষক শাহিনা আক্তার জানান, তিনি ২০০০ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে যথাযথ নিয়মানুযায়ী সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মো: আইয়ূব খান বিদেশ চলে যাওয়ার কারণে ২০১৩ সালে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। তিনি ২২ বছর নিষ্ঠার সাথে বিনাবেতনে শিক্ষকতা করেছেন। চার বছর পর আইয়ূব খান দেশে ফিরে এসে তাকে না জানিয়েই তার মনগড়া নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন এবং রায়হানা খাতুন নামে এক আত্মীয়কে সুকৌশলে সমাজ বিজ্ঞান পদে নিয়োগ দেন। তিনি এখন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ তার এমপিওভূক্তির জন্য দৌড়ঝাপ করছেন।
এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালত শাহিনা আক্তারকে স্বপদে বহাল রেখে এমপিওভূক্তির জন্য নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু বেশ কয়েক মাস অতিক্রম হলেও আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে ভূক্তভোগীর দাবি।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক জানান, ২০০০ সালে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইয়ূব খানকে প্রধান শিক্ষক ও শাহিনা আক্তারকে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষক ওমান চলে যান। চার বছর পর দেশে এসে তিনি বিধিবর্হিভূত ও মনগড়া নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে শাহিনা আক্তারের পদে তার এক আত্মীয়কে নিয়োগ দেন।
ওমান ফেরত মো: আব্দুস সালাম, নুরুল ইসলাম ও ইদ্রিস আলীসহ ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি আবুল বাশার মো: আইয়ূব খানের বিষয়ে জানান, তাদের প্রবাস সময়ে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ছেড়ে দীর্ঘদিন ওমানে ছিলেন। শাহিনা আক্তারকে তিনিই ওই প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে রেখে যান। প্রায় ২৩ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে প্রতিষ্ঠানটি ধরে রেখেছেন শাহিনা।
কিন্তু আইয়ুব খান দেশে এসে শাহিনা আক্তারকে এমপিও থেকে বঞ্চিত বা তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত না করা খুবই অমানবিক। ইদ্রিস আলী বলেন, আইয়ুব খান তার আত্মীয়, শাহিনার বিষয়ে তিনিও সুপারিশ করেছেন।
অভিযুক্ত আবুল বাশার মো: আইয়ূব খান জানান, তিনি দুই বছর টুরিষ্ট ভিসায় ওমানে ছিলেন। ওই দুই বছর বেনবেইজে তার নাম না থাকায় তিনি এমপিওভূক্ত হতে পারেননি। তাছাড়া রায়হানা খাতুন নামেও নতুন কোন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: ছাইদুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মো: আইয়ূব খান অভাব অনটনে পড়ে ২০১৩ সালে বিদেশ চলে যান। স্কুল এমপিওভূক্ত হওয়ার কিছুদিন আগে দেশে এসে পূণরায় তিনি দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। প্রতিষ্ঠানে রায়হানা আক্তার নামে কোন শিক্ষক আছে কিনা তা তার জানা নেই। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষকই ভালো বলতে পারবেন।
প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রায়হানা খাতুন প্রথমে নিয়োগের কথা স্বীকার করে পরে তা অস্বীকার করে জানান, ওই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আইয়ুব খানের সাথে বলেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জিল্লুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটির এতোসব সমস্যা তিনি জানতেন না। প্রধান শিক্ষক যেভাবে কাগজপত্র তার কাছে দিয়েছেন, এমপিও’র জন্য তিনি সেভাবেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে শাহিনা খাতুনের বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে জানান।