খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ অক্টোবর ৭, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2985 বার
আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের ঝিকরগাছা রেলস্টেশনে রেলের কর্মচারীদের হাতে এক মুক্তিযোদ্ধাকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৭অক্টোবর) সকালে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ চৌধুরী (৭০) মরহুম গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর ছেলে এবং বেনাপোল মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত নজরুল ইসলামের ভাড়াটিয়া।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ চৌধুরী বলেন, ৭১’ সালে আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করি। আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নং ০১৪১০০০৩৩৬৪। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষাতত্ত্ব এবং সাহিত্য বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করি। ভাগ্যদোষে আজ আমি ফিনলে কোম্পানির টি-ব্যাগ বিক্রয় করে আমার জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিদিনই বেনাপোল থেকে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে চা বিক্রয় করার জন্য আমাকে রেলে চড়তে হয়। আজ সকালে বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সকাল সাড়ে ১০ টায় ঝিকরগাছা স্টেশনে নেমে ট্রেনের টিটি (টিকিট চেকার) রুবেল হাসানকে প্রশ্ন করি অন্যদিন ট্রেনের বগি ৭টা থাকলেও আজ ৫টা কেন? কারণ ট্রেনে আজ অনেক ভিড় ছিলো। তখন সে (রুবেল) বলে আপনি কে? আপনাকে কেন কৈফিয়ত দেবো? তখন আমি বলি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি জানতে চেয়েছি। সেসময় দুরে দাড়িয়ে থাকা আরেকজন টিটি আব্দুল আলাল দৌড়ে এসে দুজনে মিলে আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্লাটফর্ম থেকে স্টেশন ভবনে নিয়ে আসে। সেসময় আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে আমাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। একজন আমাকে আঘাত করে আরেকজন সেই ঘটনা ভিডিও ধারণ করে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা একথা বললে রুবেল আমাকে বলে তুই কিসের মুক্তিযোদ্ধা? স্টেশন ভবনে নিয়ে আসার পর ঝিকরগাছা স্টেশনের পোর্টার আসাদুজ্জামান আসাদ তাদের সাথে মিলিত হয়। এরপর তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং আমাকে লাথি মারতে মারতে স্টেশনের সিড়ি থেকে ফেলে দেয়। এঘটনায় আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত প্রাপ্ত হই। স্টেশনের বাইরে দাড়িয়ে থাকা লোকজন আমাকে উদ্ধার করে ঝিকরগাছা থানায় নিয়ে আসে। সেখানে আমি একটা জিডি করেছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার সামনেই এই বয়ো:বৃদ্ধ মানুষটাকে রেলের কয়েকজন কর্মচারী বেধড়ক ভাবে লাথি মারছিলো। আমরা যখন প্রতিবাদ করি তখন তারা স্টেশনের ভেতরে চলে যায়।
রেলের টিটি রুবেল হাসান বলেন, ঐ লোক আমাকে চার্জ করে যে ট্রেনের কোচ কম কেনো? তখন আমি উনাকে স্টেশন মাস্টারের কাছে যেতে বললে উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। ঘটনাক্রমে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। উনি মুক্তিযোদ্ধা সেটা আমি জানতাম না। উনার গায়ে হাত তোলা আমাদের ঠিক হয়নি।
ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত বলেন, আলতাফ চৌধুরী নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হবার ঘটনা নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। ঘটনাটি রেলস্টেশনের হওয়ায় আমি উনাকে জিআরপি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলেছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জি এম আব্দুল আউয়াল ভুইঁয়া বলেন, রেলের কোনো কর্মচারী কোনো যাত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করবে এটা মেনে নেওয়া হবেনা। আমি উক্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে জনসমক্ষে প্রকাশ্যে একজন বয়োঃবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত করায় ক্ষোভে ফুঁসছে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেছেন।