সানজিদা আক্তার সান্তনা : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলার বিচার হবে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতে। বাদীকে হত্যার হুমকি ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ এনে যশোরে বিচারকার্য পরিচালনা করতে বাদীর আপত্তির প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মঙ্গলবার এ নির্দেশনা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল ফয়সাল সিদ্দিকি।

তিনি জানান, যশোরে এ মামলাটি বিচারকার্য চলাকালীন সময়ে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বাদী নিহত রিয়াদের মামা রফিকুল ইসলাম রাজুকে আসামি পক্ষ যশোর আদালতে এজলাস কক্ষে প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দেয়। শুধুই তাই নয়, অপহরণেরও চেষ্টা করা হয়। শেষমেষ পুলিশ প্রহরায় আদালত থেকে বাদীকে খুলনায় পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর থেকে বাদী আতঙ্কে ভুগছিলেন। চাঞ্চ্যকর এ মামলাটির বিচার কার্য যশোর আদালত থেকে অন্য কোনো জেলা আদালতে স্থানান্তরের জন্য বাদীর পক্ষে তিনি ২০২২ সালের ২ জুন হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেন। সেই পিটিশনের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর উচ্চ আদালত রুল জারি করেন। উক্ত রুলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দীনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্জ যশোরের আদালত থেকে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতে বদলির নির্দেশনা দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন নাইমুল ইসলাম রিয়াদ এবং শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের ৪১৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। এর জের ধরে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই দুপুর দুইটার দিকে দলীয় সন্ত্রাসীরা রিয়াদকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৫ জুলাই রিয়াদের মামা রফিকুল ইসলাম রাজু বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল সহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে সিআইডি পুলিশ তদন্ত করে। তদন্ত শেষে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল সহ তিনজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। অভিযোগপত্রে যাঁদের নাম আছে তাঁরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা যবিপ্রবি শাখার তৎকালীন সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএসটি বিভাগের ছাত্র ফয়সাল তানভীর, বিইএসএস বিভাগের ছাত্র আজিজুল ইসলাম, যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার সজিবুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজীপাড়া তেঁতুলতলা এলাকার রওশন ইকবাল শাহী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিশনপাড়ার সালসাবিল আহমেদ জিসান, পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল, ঝুমঝুমপুর চান্দের মোড় এলাকার এস এম জাবেদ উদ্দিন, খড়কী দীঘিরপাড় এলাকার কামরুজ্জামান ও কারবালা এলাকার ভুট্টো। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীণ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, মফিজুর রহমান ও মোস্তাক হোসেন। অভিযুক্তদের মধ্যে আজিজুল ইসলাম, সজিবুর রহমান, রওশন ইকবাল শাহী, সালসাবিল আহমেদ জিসান, ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল ও এস এম জাবেদ উদ্দিনকে পলাতক দেখানো হয়।