খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ মার্চ ১৩, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4584 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : শার্শার পান্তাপাডা, হরিনাপোতাসহ এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে ইট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে আবাদি জমির পুষ্টি উপাদান কমে কৃষিপণ্যের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ৫০ হাজার ১৪৮ হেক্টর তিন ফসলি আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমিতে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা, মরিচ, বেগুন, ছোলাসহ বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে সরকারি নিয়ম অমান্য করে এসব আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করছেন ইটভাটার মালিকেরা।
ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ ভাগ যে জৈব উপাদান দরকার, তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে ৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা মাটির উপরিভাগের এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত কেটে নিচ্ছেন। এতে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শার্শার পান্তাপাডা, হন্নেপোতা, নিজামপুর, গোঁড পাড়াসহ উপজেলায় ১৫/২০ ইটভাটা রয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ সাড়ে চার বিঘা অকৃষি জমিতে একটি ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। এ ছাড়া বেশির ভাগ ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে জনবসতি এলাকায়। কয়লার পরিবর্তে ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
ইটভাটা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় বছরে ৫০-৫৫ লাখ ইট তৈরি হয়। প্রতি হাজার ইট তৈরি করতে প্রায় ৮৮ ঘনফুট মাটি প্রয়োজন। সেই হিসাবে একটি ইটভাটায় বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ঘনফুট মাটি দরকার হচ্ছে। মালিকেরা এক হাজার ঘনফুট মাটি মাত্র ৬০০-৭০০ টাকায় কৃষকের জমি থেকে কেনেন।
এলাকার অনেকে জানান, কৃষকেরা জমির উর্বরতাশক্তির ক্ষতির দিক চিন্তা না করে সাময়িক লাভের আশায় অবাধে এসব মাটি বিক্রি করছেন।
অপর দিকে শার্শার হরিণাপোতা এলাকার জালাল মাটি ব্যাসায়ী তিনি ইসক্লোমিটার দিয়ে মাটি কেটে হন্নেপোতা ও পান্তা পাড়া এলাকায় দেদার মাটি বিক্রি ও পুকুর ভরাট কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানা য়ায়। আর এই মাটি কাটার ফলে শত শত বিঘা জমির ফসল বিন্ষ্ট হতে চলেছে।
পান্তা পাড়া ও হরিনাপোঁতা এলাকার অনেক কৃষক বলেন, ‘টাকার লোভে জমির মাটি বিক্রি করি। কিন্তু মাটিকাটা জমিতে ফসলের এতো বড় ক্ষতি হয়, তা আমরা জানি না।’
বাগআঁচডার ইটভাটার মালিক শফি বলেন, ‘ইটভাটা তৈরি করতে কিছুটা অনিয়ম করা হয়। এ ছাড়া জমি ও মাটি পাওয়া যায় না। তাই জমির মালিকদের কাছ থেকে আমরা মাটি ক্রয় করে থাকি।’
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এক কৃষি কর্ম কর্তা বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কৃষি বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে উর্ধতন কর্মকর্তা ইচ্ছা করলে আইনানুসারে ব্যবস্থা নিতে পারেন।