নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার অপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বহি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে বাংলাদেশ সরকারও নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১৮ সালের ৪ই জুলাইয়ে জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট তৈরির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এর আগেই ই-গেট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এবার ই-গেটের (ইলেকট্রনিক গেট) যুগে প্রবেশ করেছে বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে। ২০২২ সালের ২৮শে ডিসেম্বর বেনাপোলে ৪টি ই-গেট স্থাপনের কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে বেনাপোল এক্সিট ও ইন্টারের দু’পাশেই দু’টি করে ৪টি মেশিন বসানো হয়েছ। কর্তৃপক্ষ সেগুলো এখন ট্রাইলেও রেখেছেন। সব ঠিক থাকলে ৪ই মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের এই ই-গেটের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ই-গেট বা ইলেকট্রনিক গেট হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থা। এটি বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের ই-পাসপোর্ট সার্ভারের সাথে যুক্ত থাকবে। বাংলাদেশের নাগরিক যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে তাদের সবাই ই-গেট ব্যবহার করে নিজের ইমিগ্রেশন কার্যাবলী নিজেই সম্পন্ন করতে পারবেন। এই সেবা চালু হওয়ার পর একজন পাসপোর্ট-যাত্রী দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কার্যাবলী সম্পন্ন করতে পারবেন এবং দ্রুততার সঙ্গে ভারত বাংলাদেশের গমনা-আগমন করতে পারবেন।

এর আগে কূটনীতিক, সিআইপিসহ বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে ই-গেট ব্যবহার করতে পারতো। কিন্তু অনেক পাসপোর্ট যাত্রী দাবী ছিল সাধারণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হোক ই-গেট। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ই-পাসপোর্ট ব্যবহারকারীদের ই-গেইট ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করেন।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভিতরে ই-গেট
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০২০ সালে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন এলাকায় ১২টি এবং আগমনী এলাকায় ৩টি ই-গেট স্থাপন করা হয়।

ই-গেটগুলো স্থাপনের পরপরই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ (বহির্গমন শাখা-১) ই-গেট নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টধারী কূটনৈতিক, অফিসিয়াল ই-পাসপোর্টধারী সরকারি কর্মকর্তা, বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা (সিআইপি), সেরা করদাতা কার্ডপ্রাপ্ত ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা, ই-পাসপোর্টধারী পাইলট ও ক্রুরাই কেবল ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে উদ্বোধনের সময় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে পরিপত্রটির কার্যকারিতা নেই। তাই প্রত্যেকে ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তি ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন।

যেভাবে কাজ করে ই-গেট ই-গেটের সামনে গিয়ে প্রথমেই ই-পাসপোর্টের ছবি সম্বলিত স্মার্ট কার্ডের পৃষ্ঠাটি স্ক্যান করতে হবে। সেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে আপনার সব তথ্য যাচাই করা হবে। সব তথ্য সঠিক পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-গেট খুলে যাবে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে আপনার মুখমণ্ডল (ফেস) মেলানো হবে। যদি মিলে যায় তাহলে দ্বিতীয় গেট খুলে যাবে। তার পরে ইমিগ্রেশন পুলিশ ডেক্স ভিসাপ্রসেসিং সঠিক থাকলে পাসপোর্ট এ সিল দেবেন এভাবেই আপনার ইমিগ্রেশন শেষ হবে।

কোন কারণে ই-পাসপোর্টের ছবি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে ই-গেট সিস্টেমে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করতে হবে।

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেটের পুরো প্রকল্পের প্রযুক্তিগত বাস্তবায়ন করেছে জার্মান সরকার।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবিব বলেন, বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে বেশ কয়েকদিন আগেই ই- পাসপোর্ট ব্যবহারকারীদের জন্য ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো এখন ট্রায়াল চলছে। ৪ই মার্চ ২০২৩ এ উদ্বোধনের পর যাদের কাছে ই-পাসপোর্ট রয়েছে. কেবল তারাই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বিশেষ কোন শ্রেণির জন্য নয়। বরং ই-পাসপোর্টধারী প্রত্যেকের জন্য ই-গেট উন্মুক্ত। যাত্রীরা খুব অল্প সময়ে এর মধ্যে নিজে নিজেই ইমিগ্রেশনের কার্যাবলী সম্পন্ন করে ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন।

ই-গেট বা ইলেকট্রনিক গেট ও ই পাসপোর্টের সার্ভার সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়িং কমান্ডার আখতারুজ্জামান বলেন, ই-গেট বা ইলেকট্রনিক গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। বর্তমানে বাংলাদেশের ভিতরে ৭২টি ও বাংলাদেশের বাহিরে ৭২টি দেশে ই-পাসপোর্ট ও বিমানবন্দরগুলোতে ই-গেটের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ই-পাসপোর্ট সার্ভারের সাথে ই-গেটের সমন্বয় করা হয়েছে। একজন ই-পাসপোর্ট যাত্রী দেশের বাইরে গেলে এই ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুততার সাথে দেশের বাইরেও ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে। পাসপোর্ট অফিসের সার্ভারের সঙ্গে কোন ই পাসপোর্ট-যাত্রীর পাসপোর্টের তথ্য যদি কোন রকম অমিল থাকে তাহলে ই-গেট খুলবে না। অর্থাৎ সেই ব্যক্তি দেশের বাইরে বা ভেতরে আসতে পারবে না। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা যুগান্তকারী অধ্যায়। একজন ই-পাসপোর্ট যাত্রী আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে থাকা এই ই-গেটের সামনে গিয়ে প্রথমেই ই-পাসপোর্টের ছবি সম্বলিত স্মার্ট কার্ডের পৃষ্ঠাটি স্ক্যান করবে। সেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টযাত্রীর সব তথ্য যাচাই করবে। সব তথ্য সঠিক পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-গেট খুলে যাবে। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে পাসপোর্ট যাত্রীর মুখমণ্ডল (ফেস) মেলাবে। যদি মিলে যায় তাহলে দ্বিতীয় গেটও স্বয়ংক্রিয় ভাবে খুলে যাবে। এরপরই সে যাত্রী দেশের বাইরে বা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট এ পরিণত হয়েছে। আগামীতে সরকারি সব সেবা এভাবে আরও আধুনিক করে তোলা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।