খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ জানুয়ারি ২, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5064 বার
সানজিদা আক্তার সান্তনা : ২৫ হাজার টাকার চুক্তিতে খুন করা হয় যশোর শহরের খড়কী ধোপাপাড়ার মুদি দোকানি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এরফান ফারাজীকে। র্যাব-৬ যশোরে ক্যাম্পের সদস্যের হাতে আটক হত্যার মামলার আসামি তাওহিদ (২০) পুলিশ ও আদালতকে এই তথ্য জানিয়েছে।
গত রোববার রাতে যশোর উপশহর এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টি এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আটক তাওহিদ শহরের বেজপাড়া কবরস্থান এলাকার চাটনিওয়ালার বাড়ির ভাড়াটিয়া শহিদের ছেলে।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্প সূত্র জানাগেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের একটি টিম গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপশহর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এরফান ফারাজী হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাওহিদকে আটক করে। আটকের পর তাকে কোতয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক তাওহিদ নিজেই এরফান ফারাজীর বুকে চাকু ঢুকিয়ে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। তাওহিদের ভাষ্য, আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তির কাছে ২০১৯ সালে সরকারি চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন এরফান ফারাজী। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার চাকরি পাইয়ে দিতে পারেননি। চাকরির জন্য দেয়া টাকাও ফেরত দেননি। বিভিন্ন সময় এরফান ফারাজী ওই ব্যক্তির কাছে টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদা দিয়ে আসছিলেন। এ জন্য এরফান ফারাজীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আব্দুল কাদের। হত্যার জন্য ঘটনার ৫/৬ দিন আগে আব্দুল কাদের চাঁচড়া রায়পাড়ার মৃত লিয়াকতের ছেলে পাখির সাথে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন এবং টাকাও পরিশোধ করেন। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে পাখি, তাওহিদ, পালবাড়ি এলাকার শিশির ও চাঁচড়া রায়পাড়ার রানার ছেলে রাহুল খড়কি ধোপাপাড়ায় এরফান ফারাজীর মুদি দোকানের সামনে যায়। তখন এরফান ফারাজী দোকানের ভেতর বসেছিলেন। দোকানের সামনে গিয়ে তাওহিদ প্রথমে তার কাছে এক প্যাকেট চিপস চায়। ঝুলিয়ে রাখার কারণে এরফান ফারাজী তাকে প্যাকেট ছিঁড়ে নিতে বললে সে অস্বীকার করে। ফলে এরফান ফারাজী বসা থেকে দাঁড়িয়ে সামনে ঝুঁকে প্যাকেট ছিঁড়তে গেলে এই সুযোগে তার বুকে চাকু ঢুকিয়ে দেয় তাওহিদ। পরে তারা সেখান থেকে কারবালা কবরস্থানের ভেতর দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পিছু নিয়ে এক ব্যক্তি তাদের ধাওয়া করলেও ধরতে পারেনি।
ডিবি পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ২৫ হাজার টাকার মধ্যে তাওহিদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছিলো বলে দাবি করেছে। হত্যার পর সে পালিয়ে খুলনায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলো। পরে সেখান থেকে যশোর উপশহর এলাকায় আসে। এ সময় র্যাব তাকে আটক করে।
তিনি বলেন, তাওহিদকে সাথে নিয়ে সোমবার দুপুর ১টার দিকে রেলস্টেশনের পশ্চিমে চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টি সংলগ্ন ছোট একটি পুকুরের পাড়ের ঝোঁপ থেকে তার দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আব্দুল কাদেরের সাথে এরফান ফারাজীর চাকরির একটি চুক্তিনামা উদ্ধার করা হয়েছে। চাঁচড়া রায়পাড়া কয়লাপট্টির বাড়ি থেকে চুক্তিনামাটি উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো বলেন, আব্দুল কাদেরকে আটক করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর খড়কি ধোপাপাড়ায় নিজ দোকানের ভেতর সন্ত্রাসীদের চাকুর আঘাতে খুন হন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এরফান ফারাজী। তিনি একই এলাকার রফিকুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে। ধোপাপাড়ায় একটি মুদি দোকান পরিচালনা করতেন। হত্যার ঘটনায় গত ২৪ ডিসেম্বর নিহতের ভাই এমরান ফারাজী কোতয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।