খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ নভেম্বর ১৯, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2355 বার
আশরাফুজ্জামান বাবু, ঝিকরগাছা প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদ খননের নামে চলছে অবাধে বালি উত্তোলন। এ যেন মগের মুল্লুক। যে যেভাবে পারছে নদ থেকে বালি তুলছে। গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো ভুমিকা বা অভিযান পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে বালি খেকোরা দোর্দন্ড প্রতাপে তাদের বালি তোলা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করেছে। এতে করে ভূমিধ্বসের আতংক বিরাজ করছে নদের দুপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়াদেয়াড়া, মিশ্রীদেয়াড়া, মাগুরা, পঞ্চনগর, বারবাকপুর গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদ খননের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদের মাঝে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করছে। এর মধ্যে মিশ্রীদেয়াড়া বাজার মসজিদের সামনে, মিশ্রীদেয়াড়া বাজার সংলগ্ন হাতেমের পুকুর এবং বারবাকপুর প্রাইমারী স্কুলের পেছনের বাঁশ বাগানে আনুমানিক ৩/৪ লক্ষ ফুট বালি গাদা করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া ঝিকরগাছা হতে ছুটিপুর ব্রীজ পর্যন্ত নদের দুপাড়ের বিভিন্ন জায়গায় বালির স্তুপ দেখা যায়।
অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে নাম উঠে আসা মাগুরা ইউনিয়নের মিশ্রীদেয়াড়া গ্রামের ইউ পি সদস্য জামাল হোসেন গত ৩ বছর ধরে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কপোতাক্ষ নদের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালি উত্তোলন করে বিক্রয় করছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে বালি তুলতাম, এখন আর তুলিনা। আমার কিছু শ্যালো মেশিন নদ খননের ঠিকাদার শহীদের কাছে ভাড়া দেওয়া আছে। শহীদ সাহেব নিজেই বালি তুলছে। সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সপ্তাহ চুক্তিতে অর্থ দিতে চান। এতে রাজি না হওয়ায় জামাল মেম্বার এর সহযোগীরা বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন এবং সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে নদ খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার শহীদ মাগুরা ফুলতলা ব্রীজের নীচে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। তিনি বলেন, মৌখিক ভাবে আমি ইউ এন ও এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজ করছি। তারা সব জানেন। তিনি তার আত্মীয় হিসাবে ঝিকরগাছার কিছু রাজনীতিবিদের পরিচয় তুলে ধরেন। তবে এভাবে বালি তুলে নদ খননের কথা শিডিউলে নেই বলে স্বীকার করেন।
অন্যদিকে গদখালি মৌজার বারবাকপুর প্রাইমারী স্কুলের পেছনে বাঁশ বাগানে নদ খননের দায়িত্ব পাওয়া সহকারী ঠিকাদার আওয়াল প্রায় ২/৩ লক্ষ ফুট বালি তুলে গাদা দিয়ে রেখেছেন। সেখানে নদে দিনরাত ২৪ ঘন্টা শ্যালো ইঞ্জিন চালিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। স্হানীয় জনগন জানান তারা বালি বিক্রয়ের জন্য পার্টি খুঁজছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারের একজন কর্মচারী জানান, নদ খননের সময় যে বালি উঠছে সেটা রাখার জায়গা না থাকায় ওলিয়ারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে উক্ত বালি গাদা দিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তোলিত বালি সরকারের নাকি আপনাদের এই প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
মাগুরা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জনাব সাইফুল ইসলাম এবং গদখালি ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জনাব জাকির হোসেন জানান, ইউ এন ও স্যার আমাদেরকে তদন্ত করে বালি উত্তোলনের সাথে জড়িতদের নামের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মোতাবেক তালিকা তৈরি করে ইউ এন ও অফিসে জমা দিয়েছি।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, কপোতাক্ষ নদে এখন সরকারি প্রকল্প চলমান। যারা বালু তুলছে তারা নদ খননের দোহাই দিচ্ছে তাই সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের তালিকা প্রস্তুত করে ঝিকরগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ এর নিকট পাঠানো হয়েছে। উনাকে তদন্ত পূর্বক এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব সুমন ভক্ত বলেন, অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সাথে জড়িতদের নামের তালিকার একটি চিঠি ইউ এন ও মহোদয়ের দপ্তর থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে। তদন্ত চলছে।
এদিকে নদের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ভয়াবহ ভূমিধ্বসের আতংকে আছে নদের দুপাড়ের বাসিন্দারা। দিনদুপুরে জনসমক্ষে এভাবে বালি তুললেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্হা গ্রহণ না করায় তারা তীব্র অসন্তোষ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সাথে অবিলম্বে বালি উত্তোলন বন্ধ করা সহ এই কাজে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেন।