সুলতান মাহমুদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ছাত্র হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার করতে না পারলে, সেটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কলঙ্কজনক একটা অধ্যায় হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‘ছাত্র-জনতার খুনিদের প্রতিহত করুন’- শিরোনামে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে আয়োজিত মৌনমিছিল শেষে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ব্যানারে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।

এ সময় অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, আমরা সেই অধ্যায় রচনা করতে দিবো না। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। সরকারকে তার এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করা থেকে প্রতিরোধ করতে হবে যে, ‘এগুলো করতে পারো না, এগুলো করার তোমার এখতিয়ার নেই, তুমি সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতার উপর অত্যাচার করতে পারো না। ফলে তুমি তোমার সকল নৈতিক বৈধতা হারিয়ে ফেলেছো। এবং তোমার শাস্তি অনিবার্য।

তিনি বলেন, একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে। সেটার দায় সরকার ও তার বিভিন্ন বাহিনীর। কিন্তু তাদের সেই দায়টা তারা বিভিন্নভাবে লুকিয়েছে। এটা একটা অন্যায়। এছাড়া এখন যেসব তামাশা হচ্ছে, সেগুলোও অন্যায়। তাদের (সরকার) উচিত একটা রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাওয়া। কিন্তু তারা সেটা করছে না। তাদের বোধোদয় হওয়া উচিত যে, শতশত শিক্ষার্থী এবং জনতা কেনো রাস্তায় নেমে আসছে? একটা চক্রান্তের কথা বলত এই হাজার জনতার মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে না।

সরকার এখনো কিছুই মানেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই মানেনি। গত বারো বছরেও তারা কোনো কিছু মানেনি এবং এবার চূড়ান্ত ছিল। ফলে, ছাত্রদের মুক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার মত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা দরকার। একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা দরকার। সেই পরিবেশ সরকার তৈরি করতে দিচ্ছে না। তারা নানাভাবে একটা চক্রান্তের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না যে, তাদেরই ঘরের অনেকে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের সাথে সাধারণ জনতাও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এটা একটা গণঅভ্যুত্থান। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে, ভারতীয় উপমহাদেশে বা, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে গৌরব করার মত একটা গণঅভ্যুত্থান এটা। সেটাকে শুধু একটা জঙ্গি ন্যারেটিভ বা জামায়াতে ইসলামি চক্র বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নাই। সরকার সেদিকেই (গণঅভ্যুত্থানে পতন) যাচ্ছে। এবং আমরা মনে করি, তারা ক্রমাগতভাবে সেদিকে যেতেই থাকবে।

এই মৌনমিছিলে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম মাসুদ রেজা, ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুসমিতা চক্রবর্তী, নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিব জাকারিয়া উল্লাস ও কাজি সুসমিন আফসানা, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহরিয়ার পারভেজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, কাজি মামুন হায়দার ও শাতিল সিরাজ, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলামসহ রাবির বিভিন্ন বিভাগ ও রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।