নড়াইলে দুই সপ্তাহে ব্যাবধানে ৫ জনকে হত্যা
জেলা প্রতিনিধি নড়াইল: নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় গত দুই সপ্তাহে ৫ জন হত্যার শিকার হয়েছে। যার তিনটি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এবং আলু কেনা নিয়ে বাকবিণ্ডার জেরে একজনকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে একজনকে হত্যা করা হয়।
জানা যায়, ঈদের আগের দিন রবিবার (৩০ মার্চ) বিকালে লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা চৌরাস্তা এলাকায় নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৫০) কে পিটিয়ে হত্যা করেন এক সবজি বিক্রেতা। একই দিন সন্ধ্যায় কালিয়া উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে তালেব শেখ (৬৫) কে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করে। অপরদিকে, ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আকবার শেখ (৬৫) কে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। এদিকে গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে ফরিদ শেখ (৫৭) এবং এর পরের দিন শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে নড়াইল সদর উপজেলার নতুন বাস টার্মিনালে মোশারফ হোসেন মুসা (৪৫) এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
লোহাগড়া উপজেলাতে প্রথম হত্যাকাণ্ড: রোববার (৩০ মার্চ) বিকালে লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা চৌরাস্তা এলাকায় নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৫০) কে পিটিয়ে হত্যা করেন এক সবজি বিক্রেতা। লোহাগড়ায় নিহত আব্দুল্লাহ আল-মামুন উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের মহিষাপাড়া গ্রামের ওলিয়ার ফকিরের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়াইল জেলা শহর থেকে কাজ শেষে বিকেলে দিকে কাঁচামাল কেনার জন্য আব্দুল্লাহ আল-মামুন লক্ষীপাশা চৌরাস্তা বাজারে সবজি বিক্রেতা ইদ্রিস শেখের দোকানে যান। এ সময় আলু কেনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইদ্রিস শেখ প্লাস্টিকের গামলা দিয়ে আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা আহত মামুনকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই লোহাগড়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রামপুর এলাকা থেকে ঘাতক ইদ্রিস শেখ (৬০) কে আটক করে।
লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে ঘটনায় অভিযুক্ত ইদ্রিস শেখের নামে মামলা দায়ের করা হয়।
দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ড কালিয়া উপজেলা: রোববার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক বৃদ্ধ নিহত হন। নিহতের নাম তালেব শেখ (৬৫)। এ ঘটনায় অন্তত আরও ১০ জন আহত হন। নিহত তালেব শেখ ওই গ্রামের ইমতিয়াজ শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামে লস্কর বাড়ি ও শেখ বাড়ির মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। রবিবার সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুইচগেট বাজার এলাকায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের কোপে শেখ বংশের তালেব শেখ গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কালিয়া থানার ওসি মো. রাশিদুল ইসলাম জানান, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া, এ ঘটনায় মামলা দায়ের ও আসামি গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন।
তৃতীয় হত্যাকাণ্ড ঈদের দিন লোহাগড়া উপজেলা: ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আকবার শেখ (৬৫)। তিনি ওই গ্রামের মেকরেত শেখের ছেলে। এ ঘটনায় অন্তত আরও ১২ জন আহত হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে মনিরুল জমাদ্দার ও মিল্টন জমাদ্দার গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।রবিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জেরে সোমবার বিকেলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আকবার শেখকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হন বলে জানা যায়।
লোহাগড়া থানার ওসি মো. আশিকুর রহমান বলেন, ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে । এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। যা তদন্তাধীন রয়েছে।
চতুর্থ হত্যাকাণ্ড কালিয়া উপজেলা: শুক্রবার (১১ এপ্রিল) নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ফরিদ মোল্যা (৫৭) নামে একজন নিহত হন। এছাড়া উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের মিলন মোল্যা ও আফতাব মোল্যা পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ইতিপূর্বে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘঠেছে। থানায় উভয় পক্ষের একাধিক মামলাও রয়েছে। ঈদের দিন থেকে গ্রামটিতে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিলো। গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকালে মিলন মোল্যা পক্ষের সানোয়ার নামের একজন নড়াইলে আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একা পেয়ে আফতাব মোল্য পক্ষের লোকেরা মারপিট করে। এ নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মিলন মোল্যা পক্ষের লোকেরা আফতাব মোল্যার বাড়িতে হামলা করে। পরে খবর পেয়ে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আফতাব মোল্যা গ্রুপের ফরিদ মোল্যা গুরুতর আহত হয়ে খুলনা মেডিকেলে মৃত্যু হয়। এসময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে আরো ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কালিয়া থানার ওসি মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ২০ জনকে আটক করে থানায় হস্তানন্তর করে।
পঞ্চম হত্যাকাণ্ড নড়াইল সদর উপজেলা:শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে নড়াইল উপজেলার নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মোশারফ হোসেন মুসা (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। নিহত ওই ব্যক্তি দলিজিৎপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে নড়াইল সদর উপজেলার নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে পড়ে ছিলেন মুসা নামে ওই ব্যক্তি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কী ঘটনার জেরে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
নড়াইল সদর থানার ওসি মো.সাজেদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহতের মরদেহ নড়াইল সদর হাসপাতালে ময়নাদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।