জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ এপ্রিল ১৫, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5496 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদের বিক্রি যখন জমে উঠেছে ঠিক সেই সময় ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে নিউ সুপার মার্কেটে। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর অন্যতম বড় এই পোশাকের মার্কেটটিতে আগুন লাগে। এই আগুনের ঘটনা ঘটায় নিউমার্কেটর আশপাশের মার্কেটগুলোত বন্ধ রয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিউমার্কেটের কাছাকাছি চন্দ্রীমা সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং মল, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, নূর মেনশন সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক, ইয়াকুব সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেট, গোল্ডেন সুপার মার্কেট বন্ধ রয়েছে।
এর পাশাপাশি সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সব দোকান-অফিস বন্ধ। এই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষ ঢুকতে গেলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত গাড়িগুলো প্রবেশ করতে পারছে।
শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। ৫টা ৪৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।
পরে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেখানে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থলে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরাও।
৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই পালিত হবে মুসলমান ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এখন পোশাকের মার্কেটগুলোতে বিক্রি জমে উঠেছে। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করেছেন। দোকানে তুলেছেন নতুন পণ্য।
এ মুহূর্তে আগুন লাগার ঘটনায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। শুধু নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা নয়, আশপাশের ব্যবসায়ীদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
চন্দ্রীমা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর বলেন, এখন ঈদের বিক্রির মূল সময়। এ সময় মার্কেটে আগুন লাগা মানে পথে বসে যাওয়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা সারাবছর ধরে রোজার ঈদের বিক্রির জন্য অপেক্ষা করি। ঈদের বিক্রি কেবলি জমে উঠেছে। গতকাল খুব ভালো বিক্রি হয়েছে। এ সময় একদিন দোকান বন্ধ রাখলে অনেক ক্ষতি। এই সময়ে (বেলা ১১টা) মার্কেট মানুষে পরিপূর্ণ থাকবে। অথচ এই সময়ে মার্কেটে গেটে তালা। আমরা রাস্তায়। আমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে।’
গাউসিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মুন্সী বলেন, ‘এই আগুন লাগার ঘটনায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত। ঈদের ভরা বিক্রির সময় দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ বছর ভালো বিক্রি হবে এই আশায় অনেক টাকা নতুন বিনিয়োগ করেছি। একের পর এক মার্কেটে যেভাবে আগুন লাগছে, তাতে আমরা আতঙ্কে আছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবাজারে আগুন লাগে ভোরে, এখানেও ভোরে আগুন লাগলো। বড় দুই মার্কেটে কেন একই সময়ে আগুন লাগলো? এই আগুনের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না সংশ্লিষ্টদের ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানাবো।’
গ্লোব শপিং মলের ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই গণমাধ্যমে আগুনের খবর দেখেছি। ১০টার দিকে এখানে (গ্লোব শপিং মলের সামনে) এসেছি। গেটে তালা দেওয়া। আজ দোকান খুলতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, মহামারি করোনার তিন বছর ব্যবসা ভোলা হয়নি। এবার পরিস্থিতি ভালো ছিলো। আমরা ভালো বিক্রির আশায় ছিলাম। কিন্তু একের পর এক মার্কেটে আগুন লাগায় আমাদের সেই আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এখন ঈদের মূল বিক্রির সময়। আথচ এই সময়ে আমাদের দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
শামীম নামের নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটের দুই ও তিন তলায় তার দোকান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে তিনি দোকানে ৪০ লাখ টাকার নতুন পণ্য তুলেছেন। এছাড়া ক্যাশে নগদ টাকা ছিল। দোকান থেকে কোনো কিছুই বের করতে পারেননি।