জীবন যুদ্ধে হার-না মানা ৪ জয়িতার গল্প
নুরতাজ আলম: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ-২০২৪’ এর আওতায় জীবন যুদ্ধে লড়ুক ৪ জয়িতাদের পিছনের গল্প ছিল বেশ প্রখর। উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত হয়ে। এই বছর শিবগঞ্জে চারটি ক্যাটাগরিতে ৪ জন নারীনেত্রী জয়িতা পুরস্কারে সম্মাননা পেয়েছেন।
“শিক্ষা ও চাকরিতে সফলতা অর্জনকারী যে নারী” ক্যাটাগরিতে সাকিলা আনসারি। “অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন যে নারী”ক্যাটাগরিতে মানসুরা জাহান, “নির্যাতনের বিভীষিকা মূছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী” ক্যাটাগরিতে মোসাঃ তাসলিমা খাতুন ও “সফল জননী নারী” ক্যাটাগরিতে ফাতেমা বিবি।
সাকিলা আনসারি মেধাবী হাওয়া সত্বেও ম্যাধ্যমিক বোর্ড পরিক্ষার আগেই অল্প বয়সে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। সংসার জীবনে লেখাপড়া মেয়েটির জন্য হয়ে যায় কাল এবং ছাড়তে হয় প্রথম স্বামীকে। বাবা স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মচারী সংসারে অভাব অনটনের মধ্য দিয়েই বড় হওয়া তাই তাকে বাড়িতে পোষা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানো অসম্ভব। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হঠাৎ তার বাবা মারা গেলে অভাবের বোঝা এসে পড়ে কাঁদে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটারের সাথে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের পর থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামী আপন ফুফাতো ভাই। সত্ত্ব হল একটাই লেখাপড়া বন্ধ করা কিন্তু এক বছর সংসার করার পর দ্বিতীয় স্বামীকেও ছাড়তে হয়। ইংরেজি বিভাগে অনার্স মাস্টার্স শেষ করার পর বর্তমান সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে কর্মরত তিনি পরিশ্রম ও সাহসী মনোবল নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়ে সফলতা দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বাধ্য।
মানসুরা জাহান জীবন যুদ্ধের প্রথম সংগ্রামী নারী ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়। বাল্যবিবাহের অভিশপ মাথায় রেখেই সংগ্রাম শুরু করে লেখাপড় হতে বাধা আসে শাশুড়ি বলে ছেলের থেকে বউ বেশি লেখাপড়া হলে বউ অন্যের হাত ধরে পালিয়ে যাবে। এমন ঘটনায় গ্রাম্য সালিসে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় আমাকে। স্বামী আমাকে বুঝলেও তার পরিবার আমাকে বুঝে নাই স্বামী আমাকে নিয়ে যাই পরিবার আমার স্বামীকে অর্থের সাপোর্ট না দিলেও আমাদের পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দেয় উদ্যোগ নি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হবার মোহরানার ২০ হাজার ও বাকি টাকা মায়ের দিয়ে ৩৫ হাজার টাকা ব্যবসা শুরু করেন। জাতীয় মহিলা সংস্থার ফুট প্রসেসিং ও মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে দর্জির ট্রেনিং গ্রহণ করে অভাব অনটন থেকে পরিত্রান পেয়েও নিজ টাকায় জমি কিনে তরুণ উদ্যোক্তার পাশাপাশি মাদক ও বাল্য বিবাহের সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
মোসাঃ তাসলিমা খাতুন বলেন প্রতিটি নারীর সফলতার পিছনে থাকেন তিনি নিজেই। কারণ তার ইচ্ছা শক্তি এবং মনোবল ,তাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। তেমনি ভাবে একজন সফল গৃহিণীর পরিচয়ের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তার পরিচয় গড়ে তুলেছে নিজের নামের পাশে। কঠোর মনোবল, পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে তিনি দুর্গম গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করেছে হস্তশিল্প কারখানা, যেখানে তার মতো ভাগ্য বিড়ম্বিত ও বঞ্চিত নারীরা কাজের সুযোগ পেয়েছে। আর্থিক অভাব আর সামাজিক বঞ্চনার সঙ্গে লড়াই করে চলা এক সময়ের ভাগ্য বিড়ম্বিত এই নারী এখন নিজের জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গ্রামের হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পুরো জেলায়।
ফাতেমা বিবি তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী তবে জীবন চলার পথে কোন প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারিনি। কর্মজীবন শুরু করে ১৯৯০ সালে জুনিয়র শিক্ষকা হিসাবে। তার পছন্দের পেশায় অধিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করেন শিক্ষা যেমন মানব সেবার অগ্রদূত তেমনি তার সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় মানবতার কল্যাণে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং দুই সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সফল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রত্যক্ষ কমিয়েছেন। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সৎ এবং পরিশ্রম হওয়ার প্রেরণা তিনি জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত পরিশ্রম করে গেছেন এবং সফলতার অশেষ রত্নগর্ভা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ।
হাঙ্গার প্রজেক্ট বিশ্বাস করে, ‘নারীরাই ক্ষুধামুক্তির মূল চাবিকাঠি’। এ বিশ্বাস থেকে ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’এর মাধ্যমে সংগঠিত করে ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৃণমূলে একদল নারীনেত্রী গড়ে তোলা হয়েছে। আত্মপ্রত্যয়ী এ নারীনেত্রীগণ বর্তমানে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জীবন-জীবিকা ও উন্নয়নের এক নতুন পথের সূচনা করেছেন। তারা তৃণমূল নারীদের সচেতন ও সংগঠিত করছেন, সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করছেন। তাঁরা তাঁদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ স্থানীয়ভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন, জয়িতা পুরস্কার যার মধ্যে অন্যতম।