রাজনৈতিক দল গঠন করবে শিক্ষার্থীরা: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে প্রধান উপদেষ্টা
গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল গঠন করবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ‘র্যাচম্যান রিভিউ’ নামের এক পডকাস্টে একথা বলেছেন তিনি।
চলতি মাসে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।সম্মেলনের ফাঁকে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান বৈদেশিক বিষয়ক ভাষ্যকর গিডেয়েন র্যাচম্যানের উপস্থাপনায় ‘র্যাচম্যান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টে কথা বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেই পডকাস্ট প্রকাশ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
পডকাস্টে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস জানান, নির্বাচনের জন্য তিনি সম্ভাব্য দুটি সময়ের কথা বলেছেন। তিনি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখছেন এবং এ থেকে বিচ্যুত হতে চান না।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটি সম্ভাবনা হলো, ছাত্ররা নিজেরাই একটি দল গঠন করবে। শুরুতে যখন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করি তিনজন ছাত্রকে আমার উপদেষ্টা পরিষদে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, তারা যদি দেশের ‘জীবন’ দিতে পারে, তাহলে তারা উপদেষ্টা পরিষদেও বসতে পারে। উপদেষ্টা হিসেবে তারা ভালো কাজ করছে।
ড. ইউনূস বলেন, দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়তো তারা কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এটাও একটা মুশকিল। রাজনীতি শুরু করলে সব ধরনের রাজনীতিবিদ তাদের সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে আমরা জানি না তারা আমাদের দেশে যে রাজনীতি, তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে কি না। তবে ছাত্ররা প্রস্তুত। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। দেশজুড়ে লোকজনকে সংগঠিত করছে।
ভারতীয় মিডিয়ার ভাষ্য নিয়ে ড. ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে র্যাচম্যান প্রশ্ন করেন, তারা বলছে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। অধ্যাপক ইউনূস হয়তো টিকতে পারবেন না। সেখানে ইসলামিস্টরা রয়েছে, তারা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন লক্ষণ দেখি না। অন্তত আমি এখন কোনো লক্ষণই দেখি না। তরুণরা সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই। তাদের নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাও নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সব কিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলব, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য নিয়ে র্যাচম্যান জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেছেন, আগের সরকার ও সরকার ঘনিষ্ঠ লোকজন সব লুট করে নিয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো ফাঁকা বানিয়ে দিয়ে গেছে। তাই, আমাদের প্রধান ও প্রথম লক্ষ্য অর্থনীতির চাকা সচল করা।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার বাংলাদেশ একটি অনন্য দেশ। আমাদের দেশের আয়তন ছোট হলেও জনসংখ্যার অধিকাংশই তরুণ। দেশের জনগণের অর্ধেকেরও বেশি মাত্র ২৭ বছর বয়সসীমার মধ্যে। তারা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, সবার হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে, আন্তর্জাতিক চিন্তাভাবনায় অভ্যস্ত।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যদি যন্ত্রপাতি বা যানবাহন নির্মাণ করতে চান, আমাদের সুযোগ দিন। আমাদের তরুণদের সুযোগ দিলে তারা এগুলো তৈরি করবে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে নেপালের জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা পরিবেশবান্ধব ও পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম।’