খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, ঝিনাইদহ | তারিখঃ জুন ৮, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5743 বার
আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ মা বক পাখিকে পাখি শিকারীরা হত্যা করেছে। বাসায় রয়েছে ৪/৫টি ছোট ছোট ছানা। মা আর পৃথিবীতে নেই। বাচ্চাগুলোকে কে আহার যোগাবে ? এ ভাবে অনাহারে থাকতে থাকতে বক পাখির বাচ্চাগুলো মারা গেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে।
গ্রামবাসি শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মিজানুর রহমান মাষ্টারের ছেলে সুমন গত ৪/৫ মাস যাবত এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ইয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করে যাচ্ছেন। তার লোভাতুর দৃষ্টি পরে কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের ঘন একটি বাঁশ বাগানে। ওই বাঁশ বাগানে শতাধীক বক পাখির বাসা ছিল। প্রতিটি বাসায় রয়েছে বাচ্চা। অভিযোগ উঠেছে গত ৪ জুন ইয়ারগান নিয়ে ১০/১২টি মা বক হত্যা করে সুমন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের ফকিরচাঁদ মন্ডল, উরফান আলী ও আতেহার মন্ডলের বাঁশঝাড় থেকে বেশ কয়েকটি মা বককে গুলি করে হত্যা করে সুমন। খবর পাওয়া গেছে মা বকগুলোকে হত্যা করার পর খাবার না পেয়ে অনাহারে মৃতবরণ করেছে। এমন অমানবিক ঘটনা নিয়ে এলাকার তোলপাড় শুরু হলেও পাখি শিকারী সুমন এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে।
সরজমিনে দেখা গছে, নিরাপদ স্থান হওয়ায় ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপর গ্রামে ফকিরচাঁদ মন্ডলের বাড়ির পাশে একটি ঘন বাঁশ বাগানে দীর্ঘ ১৫/২০ বছর ধরে শতাধীক বক পাখি বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকে। এখনো ওই বাঁশ বাগানে বহু বাসা রয়েছে। প্রতিবেশিরা নিষেধ করা সত্তেও পাখি শিকারী সুমন মা বকগুলোকে নির্বিচারে হত্যা করে রসনা বিলাস সাধন করেছে।
তথ্য নিয়ে আরো জানা গেছে, পাখি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে এয়ারগান ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। রাষ্ট্রপতির আদেশের কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার জারি করা এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘‘দেশের জীববৈচিত্র, পাখি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর ৪৯ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এয়ারগান ব্যবহার বা বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে ২০০৫ সালে দেশে সকল প্রকার পাখি শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারী করে। ১৯৭৪ সালে বন্য প্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষন ও নিরাপত্তা আইনে দন্ডের বিধান রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে পাখিনিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জেল অথবা এক লাখ টাকার দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও আর্থিক জরিমানা দ্বিগুনের বিধান রয়েছে। এই আইন করার পর থেকে দেশের কোথাও পাখি শিকার করতে দেখা না গেলেও মহেশপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মিজানুর রহমান মাষ্টারের ছেলে সুমন সরকারের এই আইনকে থোড়াই কেয়ার করে একের পর এক পাখি শিকার করে যাচ্ছে। তার এই ভোজন বিলাসিতার শিকার হচ্ছে বাসায় থাকা বাচ্চা পাখিগুলো।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার মহেশপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম জানান, এমন খবর আমার জানা নেই। তবে আমি খবর নিয়ে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। উল্লেখ্য প্রধান বন কর্মকর্তার হট লাইনে এ বিষয়ে স্থানীয় একজন গনমাধ্যমকর্মী তথ্য প্রমানসহ বুধবার রাতে লিখিত অভিযোগ করেছেন।