হাসিনা সরকার গণমাধ্যমকে ভয়ানকভাবে ব্যবহার করেছে: প্রেস সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক || ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার গণমাধ্যমকে ভয়ানকভাবে ব্যবহার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ রাখায় গোয়েন্দা সংস্থারও ভূমিকা ছিল। ফোনকল এলে সাংবাদিকের চাকরি চলে যেত। নিউজ নামিয়ে ফেলতে হতো। ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই’ নামের একটি সংগঠন এই সভার আয়োজন করে।
শফিকুল আলম বলেন, “সব গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য বিগত সরকারের ছিল। ডিজিএফআইয়ের একটা ফোনকল, এনএসআইয়ের একটা ফোনকল বা ডিবির একটা ফোনকল অথবা মন্ত্রীর একটা ফোনকল যথেষ্ট ছিল। কীভাবে তারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করত তার অনেক গল্প শুনেছি।”
ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় যারা সাফাই গেয়ে কলাম লিখেছিলেন তাদের লেখা সংগ্রহ করে বই বানানোর পরামর্শ দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “কারো নামে ঘৃণা ছড়াবেন না। কাউকে শাস্তি দেওয়াও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। গবেষণা করেন, যারা বয়ান তৈরি করেছিলেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই।”
খুন করাটা জায়েজ-সেই বয়ানও বিগত সরকার তৈরি করেছিল উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের বীজ আবার যাতে রোপিত না হয়, সেজন্য সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।”
কপিরাইট (মেধাস্বত্ব) আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “কপিরাইট আইনের প্রয়োগ খুবই জরুরি। সব সাংবাদিককে এ বিষয়ে জোরালো কথা বলতে হবে।”
তিনি বলেন, “আপনি দুই মাস খেটে একটা প্রতিবেদন করলেন, সেই প্রতিবেদন এক মিনিটে আরেকটা সংবাদ প্রতিষ্ঠান বা একশ প্রতিষ্ঠান চুরি করে ফেলল। আপনি সুন্দর ছবি তুললেন, বড় পত্রিকা বিনা অনুমতিতে ছাপিয়ে দিল। একটা ভালো প্রতিবেদন করলে এক শটা প্রতিষ্ঠান চুরি করে। যারা চুরি করে তাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”
আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আপনারা সমালোচনা করতে থাকেন। কিন্তু সমালোচনার আড়ালে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আবার পুনর্বাসন করার চেষ্টা করলে আপত্তি আছে। এটাকে প্রতিহত করতে হবে।”
কেন সাংবাদিকেরা তাদের অবস্থানে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি মতাদর্শ প্রকাশ করবেন-এ প্রশ্ন তোলেন আকবর হোসেন। তিনি বলেন, “মতাদর্শ প্রকাশ করতে হলে সাংবাদিকতা ছেড়ে দেন, তারপর করেন। যেমন আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছি। মিডিয়া হাউজকে (সংবাদ প্রতিষ্ঠান) ব্যবহার করে অ্যাকটিভিজম করবেন, সেখানে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গেলে বলবেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই, এটা কি গ্রহণযোগ্য?”
আলোচনা সভায় আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কারে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। আয়োজক সংগঠনের মুখপাত্র প্লাবন তারিকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন দ্য বিজনেজ স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দিন, উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মাহবুব আলম, আইনজীবী মোল্লা মো. ফারুক কায়সার প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন।