সারাবিশ্ব | তারিখঃ নভেম্বর ২৮, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 894 বার
সারাবিশ্ব ডেস্ক : গত কয়েক দশকে, ফায়েদের বিরুদ্ধে ১১১ জন নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি ভুক্তভোগীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।
লন্ডনের হ্যারডস ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সাবেক মালিক আল ফায়েদ শুরুতে ঠাণ্ডাপানীয় বিক্রেতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে সেলাই মেশিনের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং এরপর মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে আবাসন ও জাহাজ নির্মাণের ব্যবসা শুরু করেন। এইভাবে নিজেকে একজন সফল মিসরীয় ধনকুবের হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার এক নারী জানান, ফায়েদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার সময় তিনি ছিলেন একজন কিশোরী। তিনি বলেন, ফায়েদ ছিলেন এক ভয়ানক রাক্ষসের মতো, যার মধ্যে কোনো নৈতিকতা ছিল না। তিনি দাবি করেন, হ্যারডসের সব কর্মী তার কাছে ‘খেলনা’ হিসেবে বিবেচিত হত।
ফায়েদের অপরাধের ঘটনার স্থান ছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও সেন্ট ত্রোপেজ, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি। এইসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী ব্রুস ড্রামমন্ড বলেন, হ্যারডসের অভ্যন্তরে এক ভয়ঙ্কর দুর্নীতি ও নিপীড়নের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল যা ছিল অবিশ্বাস্য এবং অন্ধকারে ডুবে থাকা।
এক ভুক্তভোগী নারী ফায়েদের অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ফায়েদ তাকে লন্ডনের পার্ক লেনের একটি বাসায় ধর্ষণ করেছিলেন, যেখানে তার কোনো সম্মতি ছিল না, এবং সে বিষয় ফায়েদকে জানানো হলেও কিছুই হয়নি।
ফায়েদের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগের পর, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কুখ্যাত যৌন নির্যাতনকারীর তালিকায় নাম লেখানোর পথে রয়েছেন।
এছাড়া, লন্ডনের অভিজাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর হ্যারডসের সাবেক মালিক ফায়েদের অপরাধের সহায়তায় পাঁচ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
এ মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু পুলিশ সদস্য ফায়েদকে তার কর্মীদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নে সহায়তা করেছেন। কিছু ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে একজন তরুণীও ছিলেন, যিনি হ্যারডসের এই মালিকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
২০০৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে, ১১১ জন নারীর মধ্যে ২১ জন পুলিশকে অভিযোগ করেছেন। ফায়েদের ওপর সম্প্রতি বিবিসি এক তথ্যচিত্র প্রকাশ করার পর ৯০ জন নারী অভিযোগ করতে এগিয়ে আসেন।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আল ফায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এসেছে। এ পর্যন্ত ৫০,০০০ পৃষ্ঠার প্রমাণ পর্যালোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে ভুক্তভোগীদের বিবৃতিও রয়েছে।
এদিকে, তদন্তের অংশ হিসেবে মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ ফায়েদের দুষ্কর্মে সহায়তা করেছেন কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে।
হ্যারডসের সাবেক নিরাপত্তা পরিচালক বব লফটাস (৮৩) সাক্ষী হিসেবে এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফায়েদের সাহায্য করার বিনিময়ে বিলাসবহুল উপহার গ্রহণ করেছিলেন। তার এই বক্তব্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লফটাস আরো দাবি করেন, এক পুলিশ কনস্টেবল নিয়মিতভাবে ঘুস হিসেবে অর্থ গ্রহণ করতেন এবং হ্যারডস থেকে তাকে গোপনে একটি মুঠোফোন প্রদান করা হয়েছিল।
লফটাস ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত হ্যারডসে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি অসুস্থ থাকায় দ্য গার্ডিয়ান তার কোনো মন্তব্য নিতে পারেনি, তবে তার সহকারী ইমন কোল বলেন, লফটাসের বিবৃতি সঠিক হতে পারে।
প্রসঙ্গত, আল ফায়েদ ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন, বিশেষত তার ছেলে দোদি ও প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পেছনে রাজপরিবারের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। ২০২৩ সালে ৯৪ বছর বয়সে আল ফায়েদ মারা যান।