বিশেষ সংবাদ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3004 বার
গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : সুস্বাদু ‘রান্না মানসিক এবং শারীরিক কাজের সমন্বয়’ (মেরি বেরি)। ভাল রান্না করতে চাইলে রাঁধুনির মানসিক সুস্থতা (পজেটিভ চিন্তা চেতনা) অপরিহার্য। রান্নার জন্য রসুঁইঘরে যতই উন্নত মানের উপকরণ ও মশলা দেন না কেন রাঁধুনির যদি ভালোমানের রান্নার মানসিকতা না থাকে তাহলে রান্না সুস্বাদু হবে না। ফলে সুস্বাদু রান্নার জন্য উপকরণ যেমন প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন রাঁধুনির মানসিকতা। প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে অংশ নেয়ায় অধিবেশনটি কার্যত ইউনূসময় হয়ে উঠেছিল। তিনি বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে সচল করতে ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল করতে দু’হাত ভরে অর্থ দিচ্ছে। সে অর্থ (রান্নার উপকরণ) যতই মানসম্পন্ন হোক রাঁধুনি (প্রশাসনের আমলা-কর্মকর্তা) অনুগত না হলে রান্না (কাজকর্ম) সুস্বাদু (সুচারু, গতিশীল) হবে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসনযন্ত্রের অবস্থা হয়েছে অনেকটা সে রকম। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যতই ড. ইউনূসের পাশে থাকুক, সংস্কারের লক্ষ্যে বিদেশ থেকে যতই প্রয়োজনীয় অর্থ আনা হোক রাঁধুনির (শেখ হাসিনার অনুগত আমলা-পুলিশ-সেনাকর্মকর্তা) কারণে রান্না সুস্বাদু (প্রশাসনের কর্মতৎপরতা) হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নানামুখি উদ্যোগ নিলেও প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণপদে কর্মরত দিল্লির অনুগত কিছু আমলা-কর্মকর্তা ও কিছু উপদেষ্টার অতি প্রগতিশীল চেতনায় কাজে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা একের পর এক বিশৃঙ্খলার কার্ড ছুঁড়ছেন আর প্রশাসনে বসে আমলারা সেখানে ঘি ঢালছেন। সচিবালয় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে একই চিত্র। অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে বাংলাদেশের প্রশাসন যন্ত্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন দিল্লির তাবেদার ও হাসিনার অনুগত কর্মকর্তারা। ছাত্রলীগের কোটায় চাকরি পাওয়া আমলা ও প্রশাসনের অন্যান্য সেক্টরে কর্মরত কর্মকর্তাদের দিয়ে ড. ইউনূসের সংস্কার কার্যক্রমে সুফল মিলবে না। সফল হতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে হাসিনা অনুগতদের বিতারিত করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশপন্থী কর্মকর্তাদের বসাতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের খোলনলচে পাল্টাতে হবে। ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমান বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টার শপথ নেয়ার পর ১৯ জন সচিবকে সরিয়ে নতুন মুখ এনেছিলেন। তিনি দৃঢ়তা দেখানোয় ২০০১ সালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। কিন্তু এখনো প্রশাসনের পরতে পরতে রয়ে গেছে তার অনুগত আমলা, পুলিশ, সেনাকর্মকর্তারা; যাদের বেশির ভাগই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও প্রমোশন দেয়া হয়। দিল্লিতে বসে এখন শেখ হাসিনা কলকাঠি নাড়ছেন আর প্রশাসনে কর্মরত সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, সিনিয়র সচিবরা কাজ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস অথচ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে নতুন করে নিয়োগ করা উপদেষ্টা, বিশেষ উপদেষ্টাদের মধ্যেও রয়েছে হাসিনা ও ভারত অনুগত ব্যক্তি। তারা দল নিরপেক্ষ ব্যক্তির বদলে নিজেদের অনুসারীদের প্রমোশন দিচ্ছেন আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিতে নিয়োগ দিচ্ছেন। দিল্লির চেতনাধারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের গতিশীল প্রচেষ্টাকে টেনে ধরে রেখেছেন। ডলার, অর্থনীতি, ব্যাংকিং সেক্টরে ড. ইউনূস গতি এনেছেন অথচ অন্যান্য সেক্টর রয়ে গেছে সেই আগের মতোই। বিভিন্ন পদে পছন্দের ব্যক্তিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব।