০৭:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

মনিরামপুর পৌরসভার তিন প্রকল্পের ২৮ লাখের সিংহভাগই ভাগাভাগির অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুর পৌরসভায় কোটেশনের মাধ্যমে নয়ছয় করে তিনটি প্রকল্পের ২৮ লাখের সিংহভাগই ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারের নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পৌরসভার টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে এমনটি অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে টেন্ডারের পরিবর্তে কোটেশনের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারের নামে নয়ছয় করে দায়সারা ভাবে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পৌরবাসীর মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

পৌরসভা সূত্রে জানাযায়, গত বছর অক্টোবর মাসের দিকে পৌরসভায় তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়। সাধারন তহবিল থেকে তিনটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয় ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্প তিনটি হলো মোহনপুর বটতলার পাশে মহাসড়কের ফুটপথের যাত্রীছাউনি সংস্কার করে মিনি পার্কে রুপান্তরিত। আর এ জন্য বরাদ্দ করা হয় আট লাখ ৫৩ হাজার টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্পটি পৌরসভার গেটের সামনে ফুটপথে পার্কিং টাইলস, নয়টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ৩২টি বৈদ্যুতিক বাল্ব ফিটিংস। এ জন্য বরাদ্দ হয় নয় লাখ ৬২ হাজার টাকা। তৃতীয় প্রকল্পটি পৌর ভবনের সামনে পানির ফোয়ারা নির্মান, লাইটিংস ও আশপাশে ফুলের গাছ লাগানো। এ প্রকল্পে বরাদ্দ হয় নয় লাখ ৬৮ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে টেন্ডার(দরপত্র) আহŸান করতে হয়। টেন্ডারে সর্বনি¤œ দরদাতা ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু এখানে সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোটেশনের মাধ্যমে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে পছন্দের তিন ঠিকাদারের মেমার্স ফয়জুল ইসলাম, মেসার্স সুমি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মোল্যা ট্রেডিং) নামে কাজ দেখিয়ে দায়সারা ভাবে সম্পন্ন হয়।

বড় অভিযোগ রয়েছে মোহনপুর বটতলার পাশে মহাসড়কের ফুটপাতের যাত্রী ছাউনিটির টিনে রং করার পর ফ্লোরে পার্কিং টাইলস সেট করা হয়। স্থানীয় সহিদ নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায় দুইলাখ টাকার মাটি ভরাট করে সেখানে তিনি বালু ও খোয়ার ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করে সেই মাটি পৌর কর্তৃপক্ষ যাত্রী ছাউনির আশপাশ সমান করে সেখানে ফুলের গাছ ও একটি ছাতা বসিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে ফুলের সব কটি গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে সেখানে মাটি ভরাটের নামে পৌরসভা থেকে ৫০ হাজার খরচ দেখানো হয়েছে। স্থাণীয় আব্দুল লতিফ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, রাস্তার পাশে পিলার বসিয়ে ফুটপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাত্রী সাধারনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন সব মিলিয়ে এ পার্কটি নির্মান করতে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। অথচ পৌরসভা খরচ দেখিয়েছে ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

অন্যদিকে ৯টি সিসি ক্যামেরা ও ৩৮টি বাল্ব লাগানো হয়েছে। প্রতিটি বাল্বের বাজার মূল্য পাঁচ থেকে ছয়’শ টাকা। অথচ মূল্য দেখানো হয়েছে ১৮’শ টাকা।সিসি ক্যামেরার বাজার মূল্য প্রতিটি দুই থেকে আড়াই হাজার হলেও দেখানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুন টাকা।এভাবেই দূর্নীতির মাধ্যমে সিংহভাগই লোপাট করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোটেশনে কাজ পাওয়া মেসার্স সুমি এন্টাপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, কাজটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তার লাইসেন্সের নামে নিয়ে নিজেরাই বাস্তবায়ন করেছে। একই কথা জানান মোল্যা ট্রেডিংয়ের মালিক মনিরুজ্জামান। তিন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন ও কার্যসহকারী আব্দুর রাশিদ তপু জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কোটেশনে কাজ হলেও তেমন অনিয়ম করা হয়নি। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পের টাকা ছাড় করা হয়েছে। বাকী দুইটার কাজ সামান্য বাকী আছে। আশা করা হচ্ছে দুই একের মধ্যে শেষ হবে। তবে ভিন্ন কথা জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার।

তিনি জানান, কোটেশনের এ তিনটি প্রকল্প গ্রহন করা হয় পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্নার আগ্রহে। তবে নিশাত তামান্না এ অভিযোগ অস্বীকার বলেন, পানির ফোয়ারা, লাইটিং ও সিসি ক্যামেরা দ্রæত স্থাপনের জন্য বলা হয় পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে। সে মোতাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারের মতামতের ভিত্তিতে কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়। তবে কাজের মান নিয়ে কোন অভিযোগ উঠলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৮:১৭:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
৬৯

মনিরামপুর পৌরসভার তিন প্রকল্পের ২৮ লাখের সিংহভাগই ভাগাভাগির অভিযোগ

আপডেট: ০৮:১৭:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুর পৌরসভায় কোটেশনের মাধ্যমে নয়ছয় করে তিনটি প্রকল্পের ২৮ লাখের সিংহভাগই ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারের নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পৌরসভার টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে এমনটি অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে টেন্ডারের পরিবর্তে কোটেশনের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারের নামে নয়ছয় করে দায়সারা ভাবে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পৌরবাসীর মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

পৌরসভা সূত্রে জানাযায়, গত বছর অক্টোবর মাসের দিকে পৌরসভায় তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করা হয়। সাধারন তহবিল থেকে তিনটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয় ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্প তিনটি হলো মোহনপুর বটতলার পাশে মহাসড়কের ফুটপথের যাত্রীছাউনি সংস্কার করে মিনি পার্কে রুপান্তরিত। আর এ জন্য বরাদ্দ করা হয় আট লাখ ৫৩ হাজার টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্পটি পৌরসভার গেটের সামনে ফুটপথে পার্কিং টাইলস, নয়টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ৩২টি বৈদ্যুতিক বাল্ব ফিটিংস। এ জন্য বরাদ্দ হয় নয় লাখ ৬২ হাজার টাকা। তৃতীয় প্রকল্পটি পৌর ভবনের সামনে পানির ফোয়ারা নির্মান, লাইটিংস ও আশপাশে ফুলের গাছ লাগানো। এ প্রকল্পে বরাদ্দ হয় নয় লাখ ৬৮ হাজার টাকা। নিয়ম রয়েছে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে টেন্ডার(দরপত্র) আহŸান করতে হয়। টেন্ডারে সর্বনি¤œ দরদাতা ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু এখানে সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোটেশনের মাধ্যমে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে পছন্দের তিন ঠিকাদারের মেমার্স ফয়জুল ইসলাম, মেসার্স সুমি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মোল্যা ট্রেডিং) নামে কাজ দেখিয়ে দায়সারা ভাবে সম্পন্ন হয়।

বড় অভিযোগ রয়েছে মোহনপুর বটতলার পাশে মহাসড়কের ফুটপাতের যাত্রী ছাউনিটির টিনে রং করার পর ফ্লোরে পার্কিং টাইলস সেট করা হয়। স্থানীয় সহিদ নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায় দুইলাখ টাকার মাটি ভরাট করে সেখানে তিনি বালু ও খোয়ার ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করে সেই মাটি পৌর কর্তৃপক্ষ যাত্রী ছাউনির আশপাশ সমান করে সেখানে ফুলের গাছ ও একটি ছাতা বসিয়েছেন। যদিও ইতিমধ্যে ফুলের সব কটি গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে সেখানে মাটি ভরাটের নামে পৌরসভা থেকে ৫০ হাজার খরচ দেখানো হয়েছে। স্থাণীয় আব্দুল লতিফ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, রাস্তার পাশে পিলার বসিয়ে ফুটপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাত্রী সাধারনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন সব মিলিয়ে এ পার্কটি নির্মান করতে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। অথচ পৌরসভা খরচ দেখিয়েছে ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

অন্যদিকে ৯টি সিসি ক্যামেরা ও ৩৮টি বাল্ব লাগানো হয়েছে। প্রতিটি বাল্বের বাজার মূল্য পাঁচ থেকে ছয়’শ টাকা। অথচ মূল্য দেখানো হয়েছে ১৮’শ টাকা।সিসি ক্যামেরার বাজার মূল্য প্রতিটি দুই থেকে আড়াই হাজার হলেও দেখানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুন টাকা।এভাবেই দূর্নীতির মাধ্যমে সিংহভাগই লোপাট করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোটেশনে কাজ পাওয়া মেসার্স সুমি এন্টাপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, কাজটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তার লাইসেন্সের নামে নিয়ে নিজেরাই বাস্তবায়ন করেছে। একই কথা জানান মোল্যা ট্রেডিংয়ের মালিক মনিরুজ্জামান। তিন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন ও কার্যসহকারী আব্দুর রাশিদ তপু জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কোটেশনে কাজ হলেও তেমন অনিয়ম করা হয়নি। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পের টাকা ছাড় করা হয়েছে। বাকী দুইটার কাজ সামান্য বাকী আছে। আশা করা হচ্ছে দুই একের মধ্যে শেষ হবে। তবে ভিন্ন কথা জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার।

তিনি জানান, কোটেশনের এ তিনটি প্রকল্প গ্রহন করা হয় পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্নার আগ্রহে। তবে নিশাত তামান্না এ অভিযোগ অস্বীকার বলেন, পানির ফোয়ারা, লাইটিং ও সিসি ক্যামেরা দ্রæত স্থাপনের জন্য বলা হয় পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে। সে মোতাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারের মতামতের ভিত্তিতে কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়। তবে কাজের মান নিয়ে কোন অভিযোগ উঠলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।