আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের ঝিকরগাছা বদরুদ্দিন মুসলিম (বিএম) হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদের নিষ্ঠুরতায় বধির হতে বসেছে এক শিক্ষার্থী। মিরাজ হোসেন নামের এক ছাত্রের কানের তালা ফাটিয়ে দিয়েছেন ঐ শিক্ষক। আহত ছাত্রকে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষকের এমন কর্মকান্ডে হতবাক এবং ক্ষুব্ধ হয়েছে অভিভাবক মহল। এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তুমুল সমালোচনা। ঐ শিক্ষকের বহিষ্কার দাবী করেছেন অনেক অভিভাবক। আহত মিরাজ ঝিকরগাছা পৌরসদরের কৃর্তিপুর হাওয়ার মোড় গ্রামের মোঃ গোলাম মোস্তফার ছেলে এবং প্রতিষ্ঠানের ১০ম শ্রেণির ছাত্র।

আহত ছাত্র ও তার অভিভাবকের সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (১৯ জুলাই) প্রতিদিনের মত টিফিনের বিরতির পর ৩ মিনিট দেরি করে মিরাজ সহ আরও ৬ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে প্রবেশ করলেই নিষ্ঠুর সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ মিরাজ হোসেনের কানের উপর সজোরে আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন ছাত্রকে হাত দিয়ে টেনে তুলে আবারও একই স্থানে আঘাত করলে তীব্র আঘাতে তার কানের তালা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। মিরাজ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে তাকে তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঔষধ সহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সে বাড়িতে গিয়ে আবারও মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পরবর্তীতে অভিভাবকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায় এবং ভর্তি রেখে চিকিৎসা করান। বর্তমানে ছাত্রটি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে শুক্রবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ইতিপূর্বেও ক্লাস চলাকালীন সময়ে মিরাজের এক সহপাঠী পেছন থেকে কলম দিয়ে আঘাত করলে সে তার বন্ধুর নিকট কলম ফোটানোর বিষয়ে পিছন ফিরে জানতে চাইলে আসাদ মিরাজের নিকট গিয়ে কানেমুখে চড় মারতে থাকে। আর বলে তোকে কলম ফুটিয়েছে আমাকে না বলে তুই পিছনে ফিরে কথা বললি ক্যান?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহকারী শিক্ষক আসাদ যখন তখন কারণে অকারণে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে অকথ্য ভাষায় ভর্ৎসনা করেন এবং মারধোর করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ সবসময় প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে কাজ করার কারণে তিনি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক-৩ হিসেবে পরিচিত।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মূল হাতিয়ার তিনি। যার কারণে অন্য সহকারী শিক্ষকের তুলনায় আসাদকে মাসে ২হাজার টাকা বেশি বেতন প্রদান করেন প্রধান শিক্ষক আঃ সামাদ। এ নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজমান।

সাদ আমিন রনি নামে এক অভিভাবক জানান, ক্লাস এইটে পড়া তার পুত্র প্রায়ই বাসায় এসে ঐ শিক্ষকের নামে নালিশ করে। সে নাকি তাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে।

ঘটনার শিকার মিরাজের বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার ছেলেকে দুপুরে মেরে কানের তালা ফাটিয়ে দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আর বলেছে এই ঘটনা কাউকে বলার দরকার নেই। তারা আমাদেরকে একবার জানানোরও প্রয়োজন মনে করেনি। আহত মিরাজের বোন বৈশাখি বলেন, এই ঘটনায় ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমরা ইউ এন ওর কাছে অভিযোগ জানাবো।

ঘটনার বিষয়ে সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর তিনি বলেন ঘটনার বিষয়ে হেডস্যার অথবা সেকেন্ড স্যারের সাথে কথা বললে ভালো হয়।

প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা ঐ ছেলের সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের লোক এখনো যশোরে আছে। ও ডাক্তারের নিকট আছে কোনো সমস্যা হবে না। আশাকরি দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিঞা বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। বিষয়টি জানি না। আপনি যেহেতু বললেন আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।

এদিকে পরিবারের সুত্রে জানা গেছে, ডাক্তার বলেছেন ঐ শিক্ষার্থী স্বাভাবিক এর তুলনায় ৩০ শতাংশ কম শুনবে। উল্লেখ্য কিছু দিন পূর্বে ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীদের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার হয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী অনি রায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।