রাজনীতি | তারিখঃ নভেম্বর ১৩, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 13022 বার
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত দেড় মাস দেশের সব জেলা ও মহানগরে সমন্বয় সমাবেশ করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল।
গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় বড় পরিসরে র্যালির পর নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবি আরও জোরালো করা এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে এবার ১০ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তা করছে বিএনপি। আগামী মাস থেকে এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে। শিগগিরই বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাবেশ ও সেগুলোর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে।
সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া— দুটিই সমান্তরালভাবে চলা উচিত। এ জন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিয়ে সামনে এগোনো দরকার। যতদিন পর্যন্ত এই রোডম্যাপ দেওয়া না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যে শঙ্কা’ রয়েছে, সেটা কাটবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসেও নির্বাচনি রোডম্যাপের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। এ অবস্থায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। অন্যথায় আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে দলটি। গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির র্যালির মূল্যায়ন করেছেন নেতারা। তারা বলেন, ঢাকায় যে র্যালি হয়েছে, বিএনপির বিবেচনায় সেটা সর্বকালের সবচেয়ে বড় র্যালি। যেটা নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। কয়েক লাখ লোকের অংশগ্রহণে এই র্যালির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং বিএনপিকে বাইরে রেখে কিংবা এড়িয়ে কোনো কিছু করা যাবে না। তা ছাড়া দলটি এই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সহযোগী ও সহায়ক শক্তি। তাই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারের মৌলিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া উচিত বলে মনে করে দলটি।
বিএনপি মনে করছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা— এই দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই এবার ১০ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরেও বড় শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি বড় র্যালিও করবে দলটি।
বৈঠকে দলের কেউ কেউ বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বরাবরই তো কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনে তারা একই সঙ্গে আন্দোলন করেছে। এখন ৫ আগস্টের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। যেটাতে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে জামায়াত বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে কি না সে প্রশ্নও সামনে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে বৈঠকে অভিমত দেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, বিশেষ করে নির্বাচন ইস্যু ও জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে যাতে কোনো মনোমালিন্য কিংবা দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার। এ জন্য জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন কেউ কেউ।
বৈঠকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সম্প্রতি তিনজনের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন যে, এদের মধ্যে দুজনকে নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং তারা আন্দোলন করছে। এই নিয়োগ নিয়ে তারাও (বিএনপি) বিস্মিত। যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও চিন্তাভাবনা করে এদের নিয়োগ দিলে এই বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। তাই সরকারের উচিত যথাসম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া। বিতর্কিত কাউকে সরকারে না রাখা এবং ভালোভাবে খোঁজখবর করে দায়িত্বে নিয়ে আসা।
এর আগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় প্রশ্ন তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেছিল বিএনপি। দলটির অভিমত, তিনি ছিলেন প্রশাসনের বিতর্কিত কর্মকর্তা। আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা নিয়োগের পর তাকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এরপর গত রবিবার তাকে সেখান থেকে সরিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা করা হয়।