০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

“হাজার প্রদীপের আলো ও আকাশে ফানুসে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রার্থনা”

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১১:০১:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • /

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।।
পাহাড়ের রাতের আকাশ আজ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় ভরে উঠেছে শত শত উজ্জ্বল ফানুসে, আর বিহার প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়েছে হাজার প্রদীপের আলোয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা সোমবার (৬ অক্টোবর) খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে।

ভোর থেকেই জেলার য়ংড বৌদ্ধ বিহার, বিশ্বশান্তি বুদ্ধ ধাতু বোগো জাদি, ধর্মপুর, সারিপুত্র পালিটোল ও পানখাইয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বিহারে ভিড় জমাতে শুরু করেন দায়ক-দায়িকারা। শুরু হয় পুণ্য অর্জনের নানা আচার-অনুষ্ঠান।

দিনব্যাপী চলে বুদ্ধ পূজা, পদ্ম ও শাপলা ফুল দান, বুদ্ধমূর্তি ও সংঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, পিণ্ডদান, চীবর দানসহ নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রত্যেকে নিজেদের ও সকল জীবের সুখ, শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অংশ নেন এসব পুণ্যকর্মে।

প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত বুদ্ধদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে পালিত হয়। বর্ষাকালে সন্ন্যাসীরা বিহারে অবস্থান করে ধ্যান ও ধর্মচর্চায় নিমগ্ন থাকেন। সেই সময়কাল শেষ হওয়ার পর এই দিনে পালিত হয় পবিত্র প্রবারণা উৎসব। এটি শুধু ধ্যান ও সাধনার সমাপ্তি নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও নতুন জীবনের পথে যাত্রার প্রতীক।

এই দিনে দায়ক-দায়িকারা অতীতের সব গ্লানি ও ভুলত্রুটি পেছনে ফেলে নতুনভাবে শুরু করার শপথ নেন। পাশাপাশি সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন।

তবে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের আবহ পায় ভিন্ন মাত্রা। বিহার প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে হাজার প্রদীপের ঝলমলে আলোয়, যা অন্ধকারকে পেছনে ফেলে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক।

আর শান্তি ও মঙ্গলের বার্তা ছড়িয়ে দিতে রাতের আকাশে উড়তে থাকে শত শত আকাশ ফানুস। পাহাড়ের আকাশ যেন তখন শান্তি ও সহাবস্থানের বার্তা নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা প্রকৃতি চৌধুরী বলেন –
“আমরা নিজেরা যেমন প্রার্থনা করি, তেমনি সব জীবের সুখ, শান্তি ও মঙ্গলের কামনায় আকাশে ফানুস উড়াই এবং হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোর পথের আহ্বান জানাই।”

ফানুস উড়ানো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে কেবল আনন্দের অংশ নয়, এটি গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। আকাশে ভেসে থাকা প্রতিটি ফানুস যেন মুক্তি, শান্তি ও নতুন সূচনার প্রতীক হয়ে ওঠে। দায়ক-দায়িকারা বিশ্বাস করেন, এই ফানুস অন্ধকার দূর করে আলোর পথের দিশা দেখায় এবং জগতের সকল জীবের জন্য শান্তি ও মঙ্গলের বার্তা বহন করে নিয়ে যায়।

একইসঙ্গে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনও একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এটি অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোয় আলোকিত হওয়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। পাহাড়ের প্রতিটি বিহার এই রাতে হয়ে ওঠে আলোর উৎসবভূমি।

প্রবারণা পূর্ণিমা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থানের এক অনন্য প্রতীক। হাজার প্রদীপের আলো আর আকাশে ভেসে থাকা ফানুস পাহাড়ের মানুষের হৃদয়ে জাগায় নতুন আশার আলো।
ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজকে একসূত্রে গেঁথে এই উৎসব মনে করিয়ে দেয় – সহাবস্থান, মানবিকতা ও ঐক্যের পথেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি ও প্রজ্ঞার আলোকিত দিগন্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

“হাজার প্রদীপের আলো ও আকাশে ফানুসে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রার্থনা”

আপডেট: ১১:০১:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।।
পাহাড়ের রাতের আকাশ আজ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় ভরে উঠেছে শত শত উজ্জ্বল ফানুসে, আর বিহার প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়েছে হাজার প্রদীপের আলোয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা সোমবার (৬ অক্টোবর) খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে।

ভোর থেকেই জেলার য়ংড বৌদ্ধ বিহার, বিশ্বশান্তি বুদ্ধ ধাতু বোগো জাদি, ধর্মপুর, সারিপুত্র পালিটোল ও পানখাইয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বিহারে ভিড় জমাতে শুরু করেন দায়ক-দায়িকারা। শুরু হয় পুণ্য অর্জনের নানা আচার-অনুষ্ঠান।

দিনব্যাপী চলে বুদ্ধ পূজা, পদ্ম ও শাপলা ফুল দান, বুদ্ধমূর্তি ও সংঘ দান, অষ্টপরিষ্কার দান, পিণ্ডদান, চীবর দানসহ নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রত্যেকে নিজেদের ও সকল জীবের সুখ, শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অংশ নেন এসব পুণ্যকর্মে।

প্রবারণা পূর্ণিমা মূলত বুদ্ধদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে পালিত হয়। বর্ষাকালে সন্ন্যাসীরা বিহারে অবস্থান করে ধ্যান ও ধর্মচর্চায় নিমগ্ন থাকেন। সেই সময়কাল শেষ হওয়ার পর এই দিনে পালিত হয় পবিত্র প্রবারণা উৎসব। এটি শুধু ধ্যান ও সাধনার সমাপ্তি নয়, বরং আত্মশুদ্ধি ও নতুন জীবনের পথে যাত্রার প্রতীক।

এই দিনে দায়ক-দায়িকারা অতীতের সব গ্লানি ও ভুলত্রুটি পেছনে ফেলে নতুনভাবে শুরু করার শপথ নেন। পাশাপাশি সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন।

তবে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের আবহ পায় ভিন্ন মাত্রা। বিহার প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে হাজার প্রদীপের ঝলমলে আলোয়, যা অন্ধকারকে পেছনে ফেলে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক।

আর শান্তি ও মঙ্গলের বার্তা ছড়িয়ে দিতে রাতের আকাশে উড়তে থাকে শত শত আকাশ ফানুস। পাহাড়ের আকাশ যেন তখন শান্তি ও সহাবস্থানের বার্তা নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা প্রকৃতি চৌধুরী বলেন –
“আমরা নিজেরা যেমন প্রার্থনা করি, তেমনি সব জীবের সুখ, শান্তি ও মঙ্গলের কামনায় আকাশে ফানুস উড়াই এবং হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোর পথের আহ্বান জানাই।”

ফানুস উড়ানো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে কেবল আনন্দের অংশ নয়, এটি গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। আকাশে ভেসে থাকা প্রতিটি ফানুস যেন মুক্তি, শান্তি ও নতুন সূচনার প্রতীক হয়ে ওঠে। দায়ক-দায়িকারা বিশ্বাস করেন, এই ফানুস অন্ধকার দূর করে আলোর পথের দিশা দেখায় এবং জগতের সকল জীবের জন্য শান্তি ও মঙ্গলের বার্তা বহন করে নিয়ে যায়।

একইসঙ্গে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনও একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এটি অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোয় আলোকিত হওয়ার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। পাহাড়ের প্রতিটি বিহার এই রাতে হয়ে ওঠে আলোর উৎসবভূমি।

প্রবারণা পূর্ণিমা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থানের এক অনন্য প্রতীক। হাজার প্রদীপের আলো আর আকাশে ভেসে থাকা ফানুস পাহাড়ের মানুষের হৃদয়ে জাগায় নতুন আশার আলো।
ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজকে একসূত্রে গেঁথে এই উৎসব মনে করিয়ে দেয় – সহাবস্থান, মানবিকতা ও ঐক্যের পথেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি ও প্রজ্ঞার আলোকিত দিগন্ত।