ঢাকা অফিস : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় নাম নেই দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, তার ছেলে রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, দলটির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজুসহ পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার। বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের আসন খালি রাখা হলেও সাদ এরশাদসহ অন্যদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

জানা গেছে, সাদের রংপুর-৩ আসন ছেড়ে না দেওয়াসহ সিনিয়র নেতাদের আসন নিশ্চিত না করায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ওপর চরম ক্ষিপ্ত পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় চুন্নুর নানা বক্তব্যেও নাখোশ হন তিনি। সাদের আসনসহ সবকিছু মিলিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে ফয়সালা না হওয়ায় এতদিন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি রওশন এরশাদ। নির্বাচনের বিষয়ে সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের বাসায় রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন জিএম কাদের। এ সময় সাদের আসন নিয়ে জিএম কাদেরের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন রওশন এরশাদ। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। তালিকায় ছেলে সাদ ও নিজের অনুসারীদের জন্য আসন খালি না রাখায় চরম ক্ষুব্ধ হন রওশন এরশাদ। এ অবস্থায় নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছেন রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রওশনপন্থি এক সিনিয়র নেতা বলেছেন, ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। কিন্তু, তাই বলে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরা নির্বাচন করব না। তিনি (জিএম কাদের) যা ইচ্ছা করবেন, আমরা মেনে নেবো না।

তিনি বলেন, রোববার রাতে আমাদের সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেছেন। রংপুরে সাদের আসন ছেড়ে দেওয়াসহ সব বিষয়ে ফয়সালা না হলে আমরা নির্বাচন বর্জন করতে পারি। ম্যাডাম নিজেই এ বিষয়ে অনড় আছেন।

বারবার অনুরোধ করার পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ না করায় জাতীয় পার্টির ঘোষিত তালিকায় দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও সাদের নাম নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেছেন, আমরা উনার নাম বাদ দেবো কেন? ফরম বিক্রির শুরুর দিন থেকে একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করেছি। বারবার অনুরোধ করেছি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে, কিন্তু উনি করেননি। প্রয়োজনে আমরা মনোনয়ন ফরম পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলাম। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা বলেছি। আর যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা তো দলের সঙ্গে নেই।

রওশন এরশাদের আসন খালি রাখা হয়েছে, জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রওশন এরশাদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। উনি এখনো দলের ফরম নেননি। ওনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ওই আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, রংপুর-৩ আসনে সাদ এরশাদকে বাদ দিয়ে চাচা জি এম কাদেরের মনোনয়ন নেওয়াসহ সিনিয়র নেতাদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় দলীয় ফরম সংগ্রহ করেননি রওশন এরশাদ। ময়মনসিংহ-৩ আসনের বর্তমান এমপি রওশন এরশাদের নিজ আসন ঠিক রাখলেও শুরুতেই রংপুর-৩ আসনে সাদকে না দিয়ে নিজেই মনোনয়ন ফরম কিনেন চাচা জি এম কাদের। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হন রওশন এরশাদ। এই আসন নিয়ে মীমাংসা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি তিনি। দলটির পক্ষ থেকে রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ ও ডা. আর কে ইসলামের জন্য তিনটি মনোনয়ন ফরম প্রস্তুত করে রাখা হয়। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও বিরোধী নেতাকে মনোনয়ন ফরম নিতে বারবার অনুরোধও করেছেন। কিন্তু, সাদের আসনে ভোট করতে অনড় জিএম কাদেরের কারণে মনোনয়ন ফরম কেনা তো দূরের কথা নির্বাচন করতেও অনীহা প্রকাশ করেছেন রওশন এরশাদ।

জানা গেছে, জিএম কাদের রংপুর-৩ আসন সাদ এরশাদকে না ছাড়লে এবং বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, জিয়াউল হক মৃধা, ইকবাল হোসেন রাজু, এসএমএম আলমসহ সিনিয়র নেতাদের প্রত্যাশিত আসন দেওয়া না হলে যেকোনো সময় নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বিরোধী নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও তার অনুসারী নেতারা। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধী নেতার দেখা-সাক্ষাতের পর সবকিছু পরিষ্কার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে আশা করছেন নেতারা। এদিকে, সোমবার রাতে রওশনপন্থি সিনিয়র নেতারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গুলশানে তার বাসায় বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।