ঝিনাইদহে তালাকের মহামারি প্রতি মাসে ২৮টি বিয়ে বিচ্ছেদ!
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ ঝিনাইদহে তালাকের মহামারি চলছে। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছেলে মেয়ের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটছে অহরহ। অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, দুই যুগের সংসার ঠুনকো অজুহাতে নিমিষেই ভেঙ্গে যাচ্ছে।
তবে তালাকের ক্ষেত্রে ঝিনাইদহে নারীরা এগিয়ে রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্টার অফিসের পরিসংখ্যান থেকে জেলায় তালাক ও বিচ্ছেদের এমন আশংকাজনক তথ্য উঠে এসেছে। তবে ঝিনাইদহ নিকাহ রেজিষ্টাররা বলছেন জেলায় তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের এই হার আরো অনেক বেশি।
ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্টার অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে জেলায় মোট বিয়ে হয় ৭ হাজার ৩২৭ জন ছেলে মেয়ের। এরমধ্যে তালাক হয়েছে ৩ হাজার ১৭৭ জন দম্পত্তির। প্রতিদিন গড়ে আটটি করে তালাক হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছর ১১৬৬ জন মেয়ে স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পুরুষের পক্ষে তালাক দেওয়া হয়েছে ২৫৯টি। আবার উভয় পক্ষের সম্মতিতে তালাক হয়েছে ১৭৫২ টি। ২০২৩ সালেও তালাকে এগিয়ে ছিল নারীরা। ওই বছরে ১৭৪৬ জন নারী তালাকের আবেদন করেন। পক্ষান্তরে পুরুষ করে ৩৮৪টি। ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৪৬টি বিয়ে হয়। মোট তালাক হয় ৩ হাজার ৯৮৪টি। ২০১৯ সালে থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ঝিনাইদহে ১৮ হাজার তালাকের ঘটনা ঘটেছে।
ঝিনাইদহ পৌর কাজী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর জানান, ২০২৪ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বিয়ে হয় ৮১০টি। আর তালাকের হয়েছে ৩৩৪টি। প্রতি মাসে প্রায় ২৮ জনের তালাক হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভায় ৫৫০টি তালাকের নোটিশ জমা পড়ে। আর ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে ৪৪ জন তালাকের নোটিশ জমা দিয়েছেন। প্রতি মাসে ১৪ জনের বেশি তালাক দিচ্ছেন। এছাড়া জেলার ৬টি পৌরসভা, মানবাধিকার সংগঠন, মহিলা বিষয়ক অফিস, মহিলা সংস্থা ও জেলা জজ আদালতের লিগ্যাল এইড অফিসে প্রতিদিন শত শত তালাকের আবেদন জমা পড়ছে।
ঝিনাইদহ পৌসভা থেকে পাওয়া তালাক নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুরুষরা তালাকের কারণ হিসেবে পরকীয়া ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া ও দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে স্ত্রীর করা আবেদনে শ^াশুড়ি ও ননদের অত্যাচার, স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, মাদকাসক্তি, নির্যাতন, যৌতুক, মানসিক পীড়ন ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত উল্লেখ করা হয়েছে। সাইফুল নামে এক যুবক জানান, সারাদিন বাড়ি না থাকার সুযোগে তার স্ত্রী গোপনে টিকটক করতো। এই কাজ করতে গিয়ে সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার গচ্ছিত টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। হারেজ নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি চার মাস ঢাকায় ছিলেন। বাড়ি এসে দেখেন তার স্ত্রী আন্যের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। এখনো তিনি স্ত্রীকে বাড়ি আনতে পারেন নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কাজী সোহরাব হোসেন জানান, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছেলে মেয়েরা তালাকের নোটিশ পাঠাচ্ছেন। এতে সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জানান, সবচে বেশি তালাক দিচ্ছেন বিদেশ থাকা স্বামীদের স্ত্রীরা। ২/৩টি সন্তানের মায়েরা জৈবিক চাহিদা মেটাতে স্কুল কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে চলে যাচ্ছেন। এছাড়া মোবাইলে পরকীয়া ও শাশুড়ি-ননদের কারণে দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামে ১৬ বছরের সংসার ত্যাগ করে একটি মেয়ে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হয়েছে। তালাকের প্রধানতম কারণ হচ্ছে শাশুড়ি-ননদের অত্যাচার। তবে তিনি তার স্বামীকে মোটেও দোষারোপ করেননি। তাদের সংসারে ৩টি সন্তানও আছে।
তালাকের বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মোঃ রুহুল কুদ্দুস জানান, দেশের প্রচলিত আইন মতে স্বামী যদি স্ত্রীকে নিকাহনামার ১৮ নং কলামে ক্ষমতা প্রদান করেন তবেই স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবেন, তাছাড়া স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন না। তিনি বলেন সমাজে যেভাবে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগই শর্ত পুরণ হচ্ছে না। ফলে তালাক ও বিচ্ছেদ নিয়ে সমাজে বিশৃংখলা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের পিপি এ্যাড এস এম মশিয়ূর রহমান জানান, বর্তমান সমাজে পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে পড়েছে, কোন শাসন নেই। ফলে সন্তানের উপর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রন কম। সন্তানরা কি করছে তা পিতামাতারা দেখছেন না। ফলে মোবাইলে আসক্ত হয়ে ছেলে মেয়েরা বিপথগামী হচ্ছে। এই অবস্থায় তাদের বিয়ে হলেও তা টিকছে না।
তাছাড়া গত ১৬ বছরে রাজনীতির কারণে উঠতি বয়সী তরুণ তরুণীদের একটি অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। জেলার আইন কর্মকর্তা এস এম বলেন, শিক্ষিত হলেও তালাকের প্রবণতা বেশি তাদের মধ্যেই