সনতচক্রবর্ত্তী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বোয়ালমারী উপজেলার একই পরিবারের সাতজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এসময় মারাত্মক আহত হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সের চালক রিপন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় ফ্লাইওভারের ওপর এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার ফেলাননগর গ্রামে বিষয়টি ইউএনও মোশারেফ হোসাইন ও ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন, বোয়ালমারী উপজেলার ফেলাননগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০), তার বড় মেয়ে ও শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী কমলা পারভীন (৩২), কমলা পারভীনের বড় ছেলে আরিফ (১৩), মেঝ ছেলে হাসিব (৮), কন্যা হাফসা (২) এবং তাসলিমার মেঝ মেয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামের সেনা সদস্য মাহামুদুল হাসান রনির স্ত্রী মোসা. বিউটি পারভীন (২৭), বিউটি পারভীনের ছেলে মেহেদী (১০)।

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফেলাননগর উত্তরপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিলে সেখানে ডাক্তাররা তাকে ঢাকায় চিকিৎসার পরামর্শ দেন। প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে মেঝ মেয়ে বিউটি বেগমের বাসায় অবস্থান করছিলেন। নিহত তাসলিমা বেগমের শারিরীক অবস্থার উন্নতি হলে আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেলাননগরের উদ্যোশে দুই কন্যাসহ নাতি-নাতনীদের নিয়ে সকাল ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা থেকে রওনা হন। বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গার মালিগ্রাম ফ্লাইওভারের অ্যাপ্রোস সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। এ সময় চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলেও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সাতজন দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। শনিবার দুপুর ৩টার দিকে স্থানীয় বোয়ালমারী উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সংবাদকর্মীরা নিহতের বাড়িতে পৌচ্ছালে বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পারে। এ সময় হৃদয় বিদারক এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে বাড়ির ফেরার পথে মালিগ্রাম ফ্লাইওভারের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে ৭জন মারা যায়। লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত তাসলিমার মেঝ ভাসুর নুরু শেখ কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী দেড় মাস আগে ঢাকায় মেয়ের বাসায় থেকে চিকিৎসা শেষে ঈদকে সামনে রেখে দুই মেয়ের পরিবারসহ বাড়ি ফিরছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি পথিমধ্যে ভাঙ্গা এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় সকলেই নিহত হয়েছেন।

শনিবার বিকেল ৫টায় এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার একটি বার্তার মাধ্যমে জানতে পারি নিহতরা সকলেই বোয়ালমারীর বাসিন্দা। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় নিহতের বাড়ি সনাক্ত করি যে, নিহতরা গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে ফরিদপুর হাসপাতাল মৃত দেহ সনাক্ত করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন।

নিহতদের পরিবারকে শান্তনা জানাতে ছুটে যান নিহতদের বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন। এ সময় ইউএনও মোশারেফ হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার স্যারের নির্দেশনায় নিহতদের সনাক্ত করতে ফেলাননগর গ্রামে যায়। সেখানে পরিবারের সাথে কথা বলে সনাক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার করে টাকা পরবর্তীতে হস্তান্তর করা হবে।