নিজস্ব প্রতিবেদক : ধ্বংস, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়; ভালোবাসা ও শান্তির সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “তরুণেরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধা, যোগ্যতা, জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।”

বুধবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। এর মাধ্যমে ছয় বছর পর দলের সমাবেশে বক্তব্য দিলেন খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সর্বশেষ তিনি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন। এরপর থেকে তিনি কোনো সমাবেশে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের সামনে আসতে পারেননি।

ভিডিওবার্তায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বলেন, “দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আপনাদের সামনে কথা বলতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার কারাবন্দী অবস্থায় আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগমুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন। সে জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, “দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বীর সন্তানদের, যাঁরা মরণপণ সংগ্রাম করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। শত শত শহিদকে জানাই শ্রদ্ধা। এ বিজয় আমাদের সামনে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।”

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ছাত্র–তরুণেরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণেরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধা, যোগ্যতা ও জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে। সব ধর্ম–গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি, প্রগতি, সাম্যের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে আসুন, আমরা তরুণদের হাত শক্তিশালী করি। ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা, শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।”

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

এর পর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিনই মঙ্গলবার পুরোপুরি মুক্তি পান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।