বর্তমান দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির একজন নেতা বলেন, ঝিকরগাছা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের কারণে প্রতিটি জায়গায় সেবা গ্রহীতাদের বড় অংকের ঘুষ দিতে হয়। এই ঘুষের পরিমান বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন রকম এবং নির্দিষ্ট করা আছে। বিক্রিত দলিল যদি সাফ কবলা হয় তবে সমিতির জন্য ১ম লাখে ২ হাজার টাকা ও পরবর্তী যত লাখ টাকা মূল্য লেখা হবে প্রতি লাখে ১ হাজার টাকা এবং এই একই দলিলে অফিস খরচের জন্য প্রথম লাখে ৮০০ টাকা ও পরবর্তী প্রতি লাখে ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। হেবা দলিলের ক্ষেত্রে সমিতির জন্য ১ম লাখে ১ হাজার টাকা ও পরবর্তী প্রতি লাখে ৫০০ টাকা এবং একই দলিলে অফিস খরচের জন্য ১ম লাখে ১ হাজার টাকা ও পরবর্তী প্রতি লাখে ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রেজিস্ট্রি বন্টননামা, অছিয়তনামা, না-দাবী পত্র, ও অন্যান্য দলিলের ক্ষেত্রে প্রতি দলিলে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া সমিতির জন্য দানপত্র দলিলে ১ হাজার, প্রত্যয়ন পত্র ৭০০, ওয়ারেশ ১১০০ টাকা এবং অফিস খরচের জন্য দানপত্র দলিলে ১ হাজার, প্রত্যায়ন পত্র ৩০০ টাকা ও ওয়ারেশ ৯০০ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হয়। ঝিকরগাছা সাবরেজিস্টার অফিসে গড়ে প্রতি মাসে ৮০০ দলিল সম্পাদিত হয়। সেই হিসাবে মাসে প্রায় কোটি টাকা পকেটে ভরছে এই সিন্ডিকেট। আদায়কৃত এসব টাকার একটা অংশ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে ব্যয় করা হয় বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অফিসে আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট বিদ্যমান। এই সকল সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ও মাস্টার মাইন্ড জুম্মান হোসেন সোহেল নকলনবিশ হওয়া সত্বেও তার জন্য অফিসের ভেতরে আলাদা একটি কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাম ক্যাশিয়ার জহুরুল হক বলেন, আমরা শুধুমাত্র আমাদের পারিশ্রমিক বাবদ দলিল প্রতি প্রথম লাখে ২ হাজার ও পরবর্তী প্রতি লাখে ১ হাজার করে টাকা নিয়ে থাকি এবং মাস শেষে সেই টাকা সকল নিবন্ধনধারী দলিল লেখকের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে থাকি। আর যে সকল টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসম্পর্কে আমি কিছু জানিনা।
দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ আকবার আলী বলেন, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তিন মাস। এধরণের কোনো টাকা লেনদেনের খবর আমার জানা নেই। বিগত আওয়ামী লীগ আমলের আশীর্বাদপুষ্ঠ জহুরুল হককে আবারও স্বপদে বহাল রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, তার নামে এর আগেও এরকম অভিযোগ উঠেছে। তাকে শুধরে দেওয়ার জন্য এই পদে রাখা হয়েছে এবং এই মাসটা দেখা হবে। সে যদি ভালো না হয় তবে ফেব্রুয়ারিতে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে। সমিতির সদস্যদের জন্য দলিল প্রতি কিছু টাকা নেওয়া হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
ঝিকরগাছা উপজেলা সাবরেজিস্টার মো: মোস্তাক হোসেন শাকিল বলেন, আমি সপ্তাহে একদিন ঝিকরগাছা অফিসে দায়িত্ব পালন করি। এরকম কোনো সংবাদ আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।