শহিদ জয়, যশোর : দুর্নীতি, ঔষধ চুরি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বদলি হওয়া স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চলছে টাকার ব্রিফকেস নিয়ে তদবির বাণিজ্য। যশোর জেনারেল হাসপাতালে তার ফেরার চেষ্টার ঘটনা এখন হাসপাতালের কর্মীদের প্রধান আলোচনা বিষয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে গত ৯ এপ্রিল খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা.মোঃ মঞ্জুরুল রশিদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল যশোরের দুর্নীতিবাজ স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। শাস্তিমূলক এই বদলিতে যশোর জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। বেশ নড়াচড়ে বসে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর বেরিয়ে আসে বিভিন্ন ভুক্তভোগী মহল থেকে। আর হাসপাতালে দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন অনিয়ম ঔষধ চুরিরঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

বদলী আদেশ যশোরে পৌছানোর দিনেও দুর্নীতিবাজ সাইফুল হাসপাতালের স্টোর থেকে এক ইজি বাইক ভরে ঔষধ পাচার করে যা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশও একটি প্রভাবশালী টেলিভিশনে সম্প্রচার হয়। এঘটনায় তিনি এখন অধরা আছেন। এসময় তাকে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তৎকালিন আরএমও আ.সামাদ এর বিরুদ্ধে। এমনকি স্টোর কিপার সাইফুল বদলী হয়ে যাওয়ার পরও তার নেতৃত্বে ১৬ জুলাই জেনারেল হাপাতালের ইমারজেন্সি থেকে কিছু পরিমান গজ ব্যান্ডেজ তুলাসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি হয়ে যায়। সেই গজ ব্র্যান্ডের চুরির ঘটনা তদন্ত হলেও সাইফুল ইসলামের ওষুধ চুরির ঘটনা এখনো অন্তরালে রয়ে গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম চাকরি জীবনে প্রথমে মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। অনিয়ম দুর্নীর্তির কারণে সেখান থেকে তৎকালীন যশোর সিভিল সার্জন ডা আতিকুর রহমান খাঁন তাকে বদলির সুপারিশ করেন। তাকে ওই সময় বাগেরহাটে বদলি করা হয়।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১৪ মার্চ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল যশোরের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দুর্নীতিবাজ স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামকে নিয়ে নানা অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে স্টোর কিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি হাসপাতালের ঔষধ চুরিসহ অন্যান্য মালামাল গোপনে অন্যত্র বিক্রি করছেন। এছাড়া হাসপাতালের ১৩ নং ওয়ার্ড ইনচার্জকে (স্টাফ নার্স) অডিটের নামে ভয় দেখিয়ে ঔষধ না দিয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিলেন।

এছাড়া হাসপাতালের সরকারি ঔষধ আনার জন্য বিভিন্ন পরিবহন খরচ, অডিটের নামে বিভিন্ন সরকারি ওষুধ বিক্রি করে দেয়া, ঔষধ সরবরাহে ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠানকে কমিশন দিতে বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ তোলা হয়। এক পর্যায়ে বিগত সরকারের সময় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এমপি স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামকে বদলীর সিদ্ধান্ত দেন। সে মোতাবেক ডা, মো. মঞ্জুরুল রশিদ ৯ এপ্রিল স্বাক্ষরিত আদেশে দেখা যায় জনস্বার্থে বদলির আদেশ করেন। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক, স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামকে বদলির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য’র খুলনা বিভাগীয় পরিচালককে অবগতির জন্য ২৭ মার্চ বার্তা প্রেরণ করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ হারুন অর রশিদ।

স্টোর কিপার সাইফুল সম্পর্কে খোজ নিয়ে জানা যায়, যশোর জেনারেল হাসপাতালে থাকাকালিন তৎকালিন তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান তার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এই সুযোগে তিনি যাবতীয় অনৈতিক ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী হয়েও তিনি বাড়ি এবং টাকার পাহাড় গড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৬ মে মাগুরা জেলার অপরাজিতা ড্রাগস থেকে টেন্ডার বিহীন এক্সটা বাজেট তৈরী করে ৯৯ লাখ ৯২ হাজার ১০০ টাকা এস.এম.আর সামগ্রী ক্রয় করেন। যার তৎকালিন বাজার দর ছিল ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬শত ৫০ টাকা। বাকী ৫০ লাখ টাকা কোন হদিসই নেই হাসপাতালের রেকর্ডে। এব্যাপারে তাকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল একাউন্ট্যান্ট এর বিরুদ্ধেও।

২০০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে ঔষধ এবং অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ১০ কোটি টাকার সরকারী টেন্ডার হলে তিনি রাতের আঁধারে ট্রাকে করে উঁচু ত্রিপল দিয়ে মাত্র কয়েক লাখ টাকার ঔষধ কিনে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। ফলে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ঔষধ বেশি দিন না যাওয়াতে আগত গরীব রোগীরা ঔষধ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফেরেন। তাছাড়া হাসপাতালে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে বৈধ বা অবৈধ আয়ের টাকা ইনকামের মাস্টারমাইন্ড এই সাইফুল ইসলাম।

পূর্বে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরিরত অবস্থায় নারীদের সাথে অবৈধ কাজের জন্যও কিছুদিনের জন্য চাকরি হারিয়েছিলেন তিনি।

এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।