আসাদুজ্জামান আসাদ।। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সন্তান ইমতিয়াজ আহমেদ জাবিরের গ্রামের বাড়ি দেউলিতে তাঁর পিতা-মাতা এবং পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন জেলা প্রশাসক মো: আজাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দল।

শনিবার দুপুরে প্রশাসনের পক্ষে সাক্ষাতের সময় জুলাই গণ গণঅভ্যুত্থানে গুলিতে নিহত শহীদ জাবিরের কবরও জেয়ারত করেন প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসী।

এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মত বিনিময় করা হয়, শান্ত্বনা দেয়া হয় এবং পরিবারের দাবি অনুযায়ী তাদের বাড়ি সংলগ্ন পথের নাম জাবিরের নামে করার আশ্বাস দেয়া হয়। তাছাড়া বাড়ির পাশে জাবিরের স্কুলের একটি ভবন নির্মান করে জাবিরের নামে করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামীতে জাবির পরিবারের যে কোন সমস্যায় পাশে থাকার ঘোষণা দেয়া হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, একজন জাবির চলে গেলেও এই পরিবারের কাছে প্রশাসন জাবির হয়েই থাকবে।তিনি জাবিরের পিতামাতার হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন এবং জানান জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই ২ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হবে।

গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যশোর জেলা থেকে যারা শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের পাশাপাশি সকল ধরনের সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক মো: আজাহারুল ইসলাম ।

ঢাকার সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৩য় সেমিস্টারের ছাত্রগত ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখ বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় রাজধানীর বনশ্রীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন জাবির। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২৬ জুলাই তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। ওই দিনই ঢাকা থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় গ্রামে এবং তৎকারীন প্রশাসনের কড়া নিরপত্তায় রাত ১০টার পরই কবরস্থ করতে বাধ্য হয় তার পিতামাতা।

২০০৪ সালে ঝিকরগাছা উপজেলার ৯নং হাজিরবাগ ইউনিয়নের দেউলি গ্রামে নওশের আলি ও শিরিনা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেন ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির। জেরিন নামে তার একটি ছোট বোন আছে। সে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাক্ষাত ও কবর জিয়ারতকালে আরো উপস্থিত ছিলেন, যশোর-এর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস. এম. শাহীন, ঝিকরগাছাউপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূপালী সরকার, সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে. এম. মামুনুর রশীদ, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর আবদুল আহাদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা সমন্বয়ক রাশেদ খান।

এদিকে, সাক্ষাৎকালে শোকসন্তপ্ত পিতা-মাতা শহিদ জাবেরের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তাঁর জীবনের নানা আলেখ্য তুলে ধরেন।এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ স্থানীয় জেডিপিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি তুলে ধরেন।

শহিদ পরিবারের সকল দাবি অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে শহিদ হয়েছেন জাবের। তাঁর পিতা-মাতা একজন জাবেরকে হারিয়েছেন। আমরা সকলে লক্ষ লক্ষ জাবের হয়ে এই পরিবারের কাছে ফিরে আসবো।”